ঢাকা ০৫:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আশুলিয়ায় ২১৯ পোশাক কারখানা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পঠিত

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আজও ২১৯টি তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাকি ১৩৩টি কারখানায় দেয়া হয়েছে সাধারণ ছুটি।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকেরা কাজে ফেরেনি। এ ছাড়া আজ সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে সব মিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮৬টি কারখানা। আর বাকি ১৩৩টি কারখানায় আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এ ছাড়া, শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শ্রমিকরা জানান, টানা ১০ দিনের বেশি সময় ধরে কারখানার ভেতরে ও সড়কে শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে টালবাহানা করছে। কিছু কাখানায় আশ্বাস দিয়েও পরে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হয়নি। এতে শ্রমিকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এছাড়া যেসব কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কারখানায় গত মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।

শ্রমিকরা আরও বলেন, বুধবার থেকে কিছু কারখানায় ১৩ (১) অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। এছাড়া কিছু কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করলেও পরে আবার সাধারণ ছুটি দেয়া হয়। আজও অনেকে কারখানায় গিয়ে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক টেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, গতকালের চেয়ে আজ কারখানা বন্ধের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে শ্রমিক অসন্তোষের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালিক শ্রমিকের আলোচনার কোনো পথ হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির কারণে শ্রমিকরা বাসায় অবস্থান করছে আর মালিকপক্ষ অফিসে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা না হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

এর আগে, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চাকরি প্রত্যাশী ও পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিন বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের তাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা যায়। সেদিন সকাল ৮টার পর থেকে শুরু হয় উৎপাদন কাজ।

তবে এরপরেও ৯ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ দাবি দাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের অন্তত ৭৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর পর ১০ সেপ্টেম্বর সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ৪০টি কারখানা বন্ধ ছিল। দাবি আদায় না হওয়ায় এদিন সকালে কাজে যোগ দিয়েও বের হয়ে যান ২১ কারখানার শ্রমিক।

এ ছাড়া গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৭০টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এরমধ্যে ৪৫টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কর্তৃপক্ষ নির্দেশে বন্ধ ছিল। আর বাকি ২৫টি কারখানায় দেয়া হয় সাধারণ ছুটি।

ট্যাগস :

আশুলিয়ায় ২১৯ পোশাক কারখানা বন্ধ

আপডেট সময় : ০৩:৩৫:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আজও ২১৯টি তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া বাকি ১৩৩টি কারখানায় দেয়া হয়েছে সাধারণ ছুটি।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, আজ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকেরা কাজে ফেরেনি। এ ছাড়া আজ সকালেও বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে সব মিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮৬টি কারখানা। আর বাকি ১৩৩টি কারখানায় আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এ ছাড়া, শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

শ্রমিকরা জানান, টানা ১০ দিনের বেশি সময় ধরে কারখানার ভেতরে ও সড়কে শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে টালবাহানা করছে। কিছু কাখানায় আশ্বাস দিয়েও পরে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হয়নি। এতে শ্রমিকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এছাড়া যেসব কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কারখানায় গত মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।

শ্রমিকরা আরও বলেন, বুধবার থেকে কিছু কারখানায় ১৩ (১) অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। এছাড়া কিছু কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করলেও পরে আবার সাধারণ ছুটি দেয়া হয়। আজও অনেকে কারখানায় গিয়ে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক টেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, গতকালের চেয়ে আজ কারখানা বন্ধের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে শ্রমিক অসন্তোষের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালিক শ্রমিকের আলোচনার কোনো পথ হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির কারণে শ্রমিকরা বাসায় অবস্থান করছে আর মালিকপক্ষ অফিসে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা না হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

এর আগে, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চাকরি প্রত্যাশী ও পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এদিন বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের এসব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের তাদের কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা যায়। সেদিন সকাল ৮টার পর থেকে শুরু হয় উৎপাদন কাজ।

তবে এরপরেও ৯ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ দাবি দাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের অন্তত ৭৯টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর পর ১০ সেপ্টেম্বর সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ৪০টি কারখানা বন্ধ ছিল। দাবি আদায় না হওয়ায় এদিন সকালে কাজে যোগ দিয়েও বের হয়ে যান ২১ কারখানার শ্রমিক।

এ ছাড়া গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৭০টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এরমধ্যে ৪৫টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক কর্তৃপক্ষ নির্দেশে বন্ধ ছিল। আর বাকি ২৫টি কারখানায় দেয়া হয় সাধারণ ছুটি।