ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউনূস-মোদির বৈঠকের ভবিষ্যৎ কী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১০:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭ বার পঠিত

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখের গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর সামরিক হেলিকপ্টারে করে সেইদিনেই ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক তলানিতে।

এদিকে এরইমধ্যে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। ওই সময় মোদির সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক হতে পারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তবে, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এতটা আগ্রহী নন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। যেকোনো উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার ক্ষেত্রে ভারতকে এমন বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগী হতে হবে, যা তারা বর্তমানে এড়িয়ে যেতে চায়।

কুগেলম্যান বলেন, প্রধান সমস্যা হলো ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি করলেও দিল্লি তাকে ছাড়তে চাচ্ছে না। কারণ, হাসিনার ভারতের অনেক নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, যদি মোদি ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তবে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এড়ানো অসম্ভব হবে।

গত সপ্তাহে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ঢাকা থেকে আসা মোদি এবং ইউনুসের মধ্যে বৈঠকের অনুরোধ মানা হবে কিনা, তা দিল্লি এখনও নিশ্চিত করেনি। তবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য এ মাসের শেষের দিকে দুজনেরই নিউ ইয়র্কে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, তারা ভারতের কাছ থেকে হাসিনার প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে আগস্টে গণবিক্ষোভ দমনে চালানো প্রাণঘাতী সহিংসতার মামলায় তার বিচার করা যায়।

প্রাথমিকভাবে শেখ হাসিনার ভারতে অল্প কিছুদিন থাকার কথা ছিল। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে শেখ হাসিনার আশ্রয় প্রার্থনার চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, মোদি-ইউনুস বৈঠক ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হলেও, বৈঠকটি যত দ্রুত হবে, দিল্লির জন্য ততই ভালো হবে।

দিল্লিকে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ‘বাংলাদেশ ২.০’ এর সঙ্গে জড়িত হওয়া শুরু করতে হবে, যা কখনোই ভারতের সমীকরণে ছিল না, উল্লেখ করেন এই অধ্যাপক।

ইয়াসমিন আরও বলেন, ভারত হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ওপর বাজি ধরেছিল এবং বাংলাদেশিদের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে চেষ্টা করেনি। ভারতের এটা বোঝার সময় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক শুধু একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে না।

ট্যাগস :

ইউনূস-মোদির বৈঠকের ভবিষ্যৎ কী?

আপডেট সময় : ১১:১০:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখের গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। এরপর সামরিক হেলিকপ্টারে করে সেইদিনেই ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক তলানিতে।

এদিকে এরইমধ্যে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। ওই সময় মোদির সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক হতে পারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তবে, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এতটা আগ্রহী নন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। যেকোনো উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার ক্ষেত্রে ভারতকে এমন বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগী হতে হবে, যা তারা বর্তমানে এড়িয়ে যেতে চায়।

কুগেলম্যান বলেন, প্রধান সমস্যা হলো ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি করলেও দিল্লি তাকে ছাড়তে চাচ্ছে না। কারণ, হাসিনার ভারতের অনেক নেতার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, যদি মোদি ইউনুসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তবে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এড়ানো অসম্ভব হবে।

গত সপ্তাহে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ঢাকা থেকে আসা মোদি এবং ইউনুসের মধ্যে বৈঠকের অনুরোধ মানা হবে কিনা, তা দিল্লি এখনও নিশ্চিত করেনি। তবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য এ মাসের শেষের দিকে দুজনেরই নিউ ইয়র্কে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, তারা ভারতের কাছ থেকে হাসিনার প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে আগস্টে গণবিক্ষোভ দমনে চালানো প্রাণঘাতী সহিংসতার মামলায় তার বিচার করা যায়।

প্রাথমিকভাবে শেখ হাসিনার ভারতে অল্প কিছুদিন থাকার কথা ছিল। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে শেখ হাসিনার আশ্রয় প্রার্থনার চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, মোদি-ইউনুস বৈঠক ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হলেও, বৈঠকটি যত দ্রুত হবে, দিল্লির জন্য ততই ভালো হবে।

দিল্লিকে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ‘বাংলাদেশ ২.০’ এর সঙ্গে জড়িত হওয়া শুরু করতে হবে, যা কখনোই ভারতের সমীকরণে ছিল না, উল্লেখ করেন এই অধ্যাপক।

ইয়াসমিন আরও বলেন, ভারত হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ওপর বাজি ধরেছিল এবং বাংলাদেশিদের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে চেষ্টা করেনি। ভারতের এটা বোঝার সময় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক শুধু একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে না।