একজন পিজিরুল শিশুমনিদের বাবা, তিনিই উপদেস্টা হওয়ার যোগ্য

- আপডেট সময় : ০৯:৩৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ৪৪ বার পঠিত
মোস্তফা মল্লিক :
পিজিরুল আলম দুলালের বাড়ি নিলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পিছিয়ে থাকা একটি গ্রামে। কর্মময় জীবনে ছিলেন একজন সফল ব্যাংকার। উত্তরা ব্যাংকের এজিএম। বাবা- মা হারা এক শিক্ষার্থী পিজিরুলের কাছে আশ্রয় চায়। চায় থাকার জায়গা। খাবারের নিশ্চয়তা। পিজিরুল দেশের দিকে তাকিয়ে দেখলেন চারদিকে এমন অনাথ অনেক। ব্যাংক থেকে স্বেচ্ছায় অবসর চান তিনি। কর্তৃপক্ষ জানালেন পরবর্তী জিএম, ভিপি তো তিনিই হবেন। কিন্তু পিজিরুলের একটাই কথা অবসরের টাকা চান তিনি।
সেই টাকা দিয়ে ১৯৯৯ সালে ৫ জন কন্যা শিশুকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘শিশু মনি’। কন্যা শিশুরা বাসা বাড়িতে যেমন থাকেন ঠিক তেমন একটা পরিবেশ দেয়ার চেষ্টা করলেন তিনি। অবসরের টাকার সঙ্গে যুক্ত হল নিজেরে জমি বিক্রির টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়ে শুরু ‘শিশু মনি’র যাত্রা।
গত ২৫ বছরে এই অঞ্চলের ১২শ’র বেশি অনাথ কন্যার ঠাঁই হয়েছে এখানে। যাদের বাবা-মা কেউ নেউ -তাদের অভিবাক হয়ে যান পিজিরুল। নিজের পকেটের পয়সায় শুধু এসব শিশুদের লেখাপড়াই না সঙ্গে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, শিক্ষার প্রসার, স্বাবলম্বী হতেও সহায়তা করেন তিনি।
ছোট্ট বাচ্চাদের যাতায়াতের জন্য আছে যানবাহনও। যারা দুর্বল তাদের পিজিরুল বাইরে শিক্ষকদের কাছেও পড়ান। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৪ জনের অংশগ্রহণসহ মোট ৫০৪ জন এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়। অনার্স মাস্টার্স পাস করেছে অনেক শিক্ষার্থী।
২০১৬ সালে। চ্যানেল আই এ প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর এক ব্যক্তি ‘সোনা মনি’কে ৫ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা করেছিলেন।
সাদা মানুষ পিজিরুল জীবনে কখনও মিথ্যে বলা শিখেনি। তার ফেইস বুক নেই, হাজার হাজার শিক্ষার্থী বা শ্রমিক বা কর্মীর লোক দেখানো ভালোবাসা নেই। তাঁর শুধু আছে দেশ গড়ার মনটা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এসব পিজিরুল আলমদের আমরা কখনও জানতেই চাইনি। এখনো কি চাচ্ছি?
প্লিজ আমি মনের ভেতর থেকে এই লেখাটি লিখেছি। কেউ আবার ভাববেন না যেন আমি পিজিরুল আলমকে উপদেষ্টা করতে বলছি। তার আগ্রহ নেই এসবে। কারা উপদেষ্টা পরিষদে আছেন সে খবরও তার কাছে নেই। কারণ তিনি জানেন দিন শেষে এই অনাথ শিশুদের জন্য যে খাবার আসবে তার টাকাটা এই ৮০ বছর বয়সেও তাঁকেই নিজের আয় থেকে দিতে হবে। আমার আগ্রহ হচ্ছে- কেউ জানুক বা না জানুক, রাষ্ট্র যেন এমন মহান পিজারুলদের খবর জানুক। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।