সময় ডেস্ক :
প্রথম ছবিটি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এবং দ্বিতীয় ছবিটি ৮ জুন ২০২১ তারিখে Nôrvic Hôspital এ তোলা। ছবির মানুষটি কিন্তু একজনই, তিনি সাবেক মিস ওয়াল্ড নেপাল সেকেন্ড রানার আপ নিশা ঘিমেরি।
তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে একজন খ্যাতনামা মডেল এবং শীর্ষ অভিনেত্রী হিসেবে নিশা ২০১৮ সালে তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে। শৈশবের স্বপ্ন তখন তার হাতের মুঠোয়, অভাবী পরিবার থেকে উঠে আসা নিশা সবে প্রতিভার বলে তার পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে তুলে নেওয়ার উচ্চাশা নিয়ে এগোচ্ছে। বিনোদন পাড়ায় সাড়া ফেলে, বড় বড় কোম্পানি তাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পাওয়ার দৌড়ে নামে। তার দৃষ্টি আকর্ষনের প্রতিযোগিতায় নামে নেপাল ও ভারতের রাজনীতিবিদ এবং বিনোদন জগতের শীর্ষস্থানীয়রা। সবাই তার সাথে কাজ করার আগ্রহ দেখায়, তার মাঝে বিশাল সম্ভাবনার আভাষ দেখতে পায়।
২০১৯ সালের জানুয়ারীতে নিশা মডেলিং এবং প্রতিভা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আরও বাড়াতে ভারতের দেরাদুনে যায়। দুর্ভাগ্যবশতঃ সে মাস খানেক পরে {স্থানীয় ট্যাবলয়েডের মতে} সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়। এসময় তার পরিবার তার চিকিৎসার খরচ দিতে পারেনি, যে সকল লোক তার সাথে কাজ করার আগ্রহ নিয়ে তার পেছনে ছুটতো, তার মনোযোগ আকর্ষণে ব্যতিব্যস্ত ছিল হঠাৎ তারা অদৃশ্য হয়ে যায়…
খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালের বন্ধুরা কেবল এই দ্বিতীয় ছবিটির মতো ফটো তুলতে এবং লাইক অর্জনের জন্য তা নেটে শেয়ার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিন্তু তাকে সাহায্য করার জন্য একেবারে কিছুই করেনি। রাজনীতিবিদ, বিনোদনজগত এবং লক্ষ লক্ষ ফলোয়ারের কেউই হাসপাতালে আসে নি…!!
চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় মৃত্যুর অপেক্ষায় তার পরিবার তাকে নেপালে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
কর্মজীবনের সুসময়ে, যারা তাদের ব্র্যান্ডকে নিশার হাত ধরে এগিয়ে নিতে চেয়েছিল তাদের মধ্যে একজন মেঘা চৌধুরী। নিশার ম্যানেজার তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো এইবলে যে, মেঘার মতো ছোট উদ্যক্তার সাথে তার কাজ করা উচিত নয়। একমাত্র সেই মেঘা চৌধুরী-ই নিশার অসুস্থতার খবর ইন্টারনেটের মাধ্যমে, বিশেষত বন্ধুদের ভাইরাল হওয়া পোস্টের ছবি দেখে জানতে পেরে হাসপাতাল ও থেরাপির বিল পরিশোধ করেছিল ।
দু’বছর মরণ যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে নিশার জিবন প্রদীপ নিভে যায়। এবারও সেই প্রত্যাখ্যাত ছোট উদ্যক্তা মেঘা ই দাফনের খরচ বহন করে এবং ভার্সিটি পড়ুয়া নিশার ভাইবোনদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার প্রস্তাবও দেয়…এ সময় নিশার ম্যানেজারের টিকিটিও দেখা যায়নি…!
সু-সময়ে যারা আমাদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকে, দুঃসময়ে তাদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ…
আবার… যাদের অবহেলা করি হয়তো তাদেরই মাঝে কেউ পাশে দাঁড়াবে, এরই নাম জীবন সফর….