ঢাকা ১১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কানাডার বিষয়ে মার্কিন-ব্রিটিশ চাপ সামলাতে পারবে ভারত?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৪০:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১০ বার পঠিত

ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় কানাডার নাগরিক, বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যার তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। কানাডার দাবি, শিখদের জন্য খালিস্তান নামে মাতৃভূমির দাবিতে চালিয়ে যাওযা আন্দোলনের নেতা হারদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত।

গত বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তিনি ভারতের সঙ্গে কোনো বিতণ্ডা সৃষ্টি হয় এমন পরিবেশ তৈরি করতে চান না। কিন্তু ভারত কানাডার সার্বভৌমত্ত্ব লঙ্ঘন করেছে।

ট্রুডো বলেন, ভারত সরকার ক্যানাডার নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ত্বে আগ্রাসীভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এমনটা ভেবে ভয়াবহ ভুল করেছে। কানাডিয়ানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের উত্তর দিতে হবে। তবে কানাডার সরকার প্রধানের এমন অভিযোগকে অযৌক্তিক ও অসংগত বলে অভিহিত করেছে ভারত।

হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে কানাডা ও ভারতের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছে যে, দেশ দুটি কূটনীতিকদেরকে নিজ নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভারতের উচিত কানাডার অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা এবং কানাডাকে তদন্তে সহায়তা করা।

একদিন পর যুক্তরাজ্য এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে কানাডার মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দেশটি। কানাডার বিচারব্যবস্থার উপর যুক্তরাজ্যের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। সার্বভৌমত্ত্ব এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের গভীর ও শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। কানাডার অভিযোগের ফলে পশ্চিমা মিত্রদের সাথে আমাদের সহযোগিতার সস্পর্কের অবনতি ঘটবে না।

অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন মন্ত্র ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট শান্থি ম্যারিয়েট ডি’সুজা। তার মতে, ওয়াশিংটন ও লন্ডনের সঙ্গে নতুন দিল্লির সম্পর্ক বহুমাত্রিক। কোনো একটি ঘটনা পুরো সম্পর্ককে প্রভাবিত না করার সম্ভাবনাই বেশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে নতুন দিল্লি শক্তিশালী মিত্র এমন বিবেচনায় সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের।

সামরিক খাতেও দেশ দুটি পরস্পরের কাছে আসছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক ড্রোন কেনার জন্য চার বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দিল্লি।

এদিকে সম্পর্ক দৃঢ় করতে এগিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যও। এরই মাঝে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি করার পথে। খুব দ্রুতই এই চুক্তি আলোর মুখ দেখবে বলে জানা গেছে।

সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং প্রফেসর সি রাজা মোহন বলেন,  ফাইভ আইজ-এর দেশগুলোর সঙ্গে এখনকার মতো এত ভালো সম্পর্ক কখনোই ভারতের ছিল না। ফাইভ আইজ হলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি গোয়েন্দা জোট।

এই গবেষক অবশ্য শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কানাডার অবস্থানের সমালোচনা করেন। তার মতে, বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়ার নামে অপরাধী চক্র এবং ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবিদীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাতে পারে না।  প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করার পরিবর্তে এমন বিষয় ওই দেশের কর্তৃপক্ষকেই সামলাতে হবে।

ট্যাগস :

কানাডার বিষয়ে মার্কিন-ব্রিটিশ চাপ সামলাতে পারবে ভারত?

আপডেট সময় : ১০:৪০:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় কানাডার নাগরিক, বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যার তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে ভারতের উপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। কানাডার দাবি, শিখদের জন্য খালিস্তান নামে মাতৃভূমির দাবিতে চালিয়ে যাওযা আন্দোলনের নেতা হারদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত।

গত বুধবার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তিনি ভারতের সঙ্গে কোনো বিতণ্ডা সৃষ্টি হয় এমন পরিবেশ তৈরি করতে চান না। কিন্তু ভারত কানাডার সার্বভৌমত্ত্ব লঙ্ঘন করেছে।

ট্রুডো বলেন, ভারত সরকার ক্যানাডার নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ত্বে আগ্রাসীভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে এমনটা ভেবে ভয়াবহ ভুল করেছে। কানাডিয়ানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের উত্তর দিতে হবে। তবে কানাডার সরকার প্রধানের এমন অভিযোগকে অযৌক্তিক ও অসংগত বলে অভিহিত করেছে ভারত।

হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে কানাডা ও ভারতের সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছে যে, দেশ দুটি কূটনীতিকদেরকে নিজ নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভারতের উচিত কানাডার অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা এবং কানাডাকে তদন্তে সহায়তা করা।

একদিন পর যুক্তরাজ্য এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে কানাডার মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দেশটি। কানাডার বিচারব্যবস্থার উপর যুক্তরাজ্যের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। সার্বভৌমত্ত্ব এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের গভীর ও শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। কানাডার অভিযোগের ফলে পশ্চিমা মিত্রদের সাথে আমাদের সহযোগিতার সস্পর্কের অবনতি ঘটবে না।

অনেকটা একই সুরে কথা বলেছেন মন্ত্র ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট শান্থি ম্যারিয়েট ডি’সুজা। তার মতে, ওয়াশিংটন ও লন্ডনের সঙ্গে নতুন দিল্লির সম্পর্ক বহুমাত্রিক। কোনো একটি ঘটনা পুরো সম্পর্ককে প্রভাবিত না করার সম্ভাবনাই বেশি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে নতুন দিল্লি শক্তিশালী মিত্র এমন বিবেচনায় সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের।

সামরিক খাতেও দেশ দুটি পরস্পরের কাছে আসছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক ড্রোন কেনার জন্য চার বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দিল্লি।

এদিকে সম্পর্ক দৃঢ় করতে এগিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যও। এরই মাঝে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি মুক্ত বাণিজ্যের চুক্তি করার পথে। খুব দ্রুতই এই চুক্তি আলোর মুখ দেখবে বলে জানা গেছে।

সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং প্রফেসর সি রাজা মোহন বলেন,  ফাইভ আইজ-এর দেশগুলোর সঙ্গে এখনকার মতো এত ভালো সম্পর্ক কখনোই ভারতের ছিল না। ফাইভ আইজ হলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি গোয়েন্দা জোট।

এই গবেষক অবশ্য শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কানাডার অবস্থানের সমালোচনা করেন। তার মতে, বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা দেওয়ার নামে অপরাধী চক্র এবং ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবিদীদের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাতে পারে না।  প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করার পরিবর্তে এমন বিষয় ওই দেশের কর্তৃপক্ষকেই সামলাতে হবে।