ঢাকা ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় ‘মব’ তৈরি করে ট্রিপল মার্ডার: নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫ ৩১ বার পঠিত

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মব গঠনের মাধ্যমে এক নারী ও তার দুই সন্তানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই নারীর আরেক মেয়ে, যিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক রোকসানা আক্তার রুবির (৫৫) বাড়ি ঘেরাও করে। পরে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। মাকে রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারান তার মেয়ে তাসফিয়া আক্তার জোনাকি (২৯), ছেলে রাসেল মিয়া (২৮)। গুরুতর আহত হন আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৬)।

শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রিক্তা আক্তার বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইউপি সদস্যসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০-২৬ জনকে আসামি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) ও ছবির মিয়া (৪৫)। তাদের সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গ্রেপ্তার অন্য ছয়জন হলো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক ওষুধের দোকান থেকে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ ওঠে বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণের বিরুদ্ধে। ওই তরুণ ছিলেন নিহত জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের সহযোগী। ফোন চুরির অভিযোগে মঙ্গলবার স্থানীয় মেম্বার বাচ্চু মিয়া ও বাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে মারুফকে মারধর করা হয়।

এ ঘটনা জানতে পেরে রুবি তাকে ছাড়াতে গেলে বাচ্চু মিয়া ও তার অনুসারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। পরদিন বুধবারও দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে। এরই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের নেতৃত্বে লোকজন রুবির বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনাস্থলেই রুবি, রাসেল ও জোনাকি নিহত হন।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’

এদিকে গ্রেপ্তারের ভয়ে কড়ইবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ফলে শুক্রবার বিকেলে নিহতদের জানাজা ও দাফনে মাত্র ৮–৯ জন অংশ নেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, নিহতদের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত ও ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

র‍্যাব-১১–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত একটি মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’

ট্যাগস :

কুমিল্লায় ‘মব’ তৈরি করে ট্রিপল মার্ডার: নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার

আপডেট সময় : ১০:৩৪:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মব গঠনের মাধ্যমে এক নারী ও তার দুই সন্তানকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওই নারীর আরেক মেয়ে, যিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক রোকসানা আক্তার রুবির (৫৫) বাড়ি ঘেরাও করে। পরে তাকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। মাকে রক্ষার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারান তার মেয়ে তাসফিয়া আক্তার জোনাকি (২৯), ছেলে রাসেল মিয়া (২৮)। গুরুতর আহত হন আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৬)।

শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রিক্তা আক্তার বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ইউপি সদস্যসহ ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০-২৬ জনকে আসামি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) ও ছবির মিয়া (৪৫)। তাদের সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। গ্রেপ্তার অন্য ছয়জন হলো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক ওষুধের দোকান থেকে মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ ওঠে বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণের বিরুদ্ধে। ওই তরুণ ছিলেন নিহত জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের সহযোগী। ফোন চুরির অভিযোগে মঙ্গলবার স্থানীয় মেম্বার বাচ্চু মিয়া ও বাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে মারুফকে মারধর করা হয়।

এ ঘটনা জানতে পেরে রুবি তাকে ছাড়াতে গেলে বাচ্চু মিয়া ও তার অনুসারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। পরদিন বুধবারও দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলতে থাকে। এরই জেরে বৃহস্পতিবার সকালে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের নেতৃত্বে লোকজন রুবির বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনাস্থলেই রুবি, রাসেল ও জোনাকি নিহত হন।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’

এদিকে গ্রেপ্তারের ভয়ে কড়ইবাড়ি গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ফলে শুক্রবার বিকেলে নিহতদের জানাজা ও দাফনে মাত্র ৮–৯ জন অংশ নেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, নিহতদের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত ও ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

র‍্যাব-১১–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত একটি মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’