জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুট

- আপডেট সময় : ১০:৩৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪ ৩৮ বার পঠিত
অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর অবশেষে সিলেটের জাফলংয়ের ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ)-ভুক্ত এলাকা শতকোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। একাটি মামলা গোয়াইনঘাট থানায় গত শনিবার রাতে দায়ের হয়। এর দুদিন আগে পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে একটি এজাহার দায়ের করলে সেই মামলাটিও রেকর্ড করা হয়। প্রথম মামলায় পদ হারানো জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ ও জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপনকে প্রধান আসামি করা হয়।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একই ঘটনায় পরিবেশ আদালতে আরেকটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। দুই মামলার আসামির সংখ্যা ১১৪ জন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার জানান, পাথর লুটের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়েরকৃত দুটো মামলার মধ্যে একটি গোয়াইনঘাট থানায় ও অপরটি পরিবেশ আদালতে দায়ের করা করা হয়। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বালু-পাথর লুটের মহোত্সব চলে। এমনকি ইসিএ-ভুক্ত এলাকা থেকে পাথর লুটের ঘটনায় সর্বসাধারণের মধ্যে তীব্র প্রক্রিয়া দেখা দেয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট জাফলংয়ের ইসিএ থেকে ১২০ কোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানায় দায়ের করা এজাহারে আসামিরা হলেন—জাফলং এলাকার চৈলাখেল গ্রামের সিলেট জেলা বিএনপির পদ স্থগিত হওয়া যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ, জাফলং বাজারের বাসিন্দা, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ও বিলুপ্ত হওয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ ৯২ জন। আসামিদের মধ্যে অন্তত ৭০ ভাগই বিএনপির সমর্থক আর বাকি ৩০ ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থক। এ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার হয়নি।
এদিকে, ঐ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সিলেটের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (পরিবেশ) ২২ জনের বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মামুনুর রশীদ।
পাথর লুটের ঘটনায় ৯২ জন আসামির নাম উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে গত শুক্রবার গোয়াইনঘাট থানায় একটি এজাহার জমা দেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক এটি মামলা হিসেবে অজ্ঞাত কারণে সেটি রেকর্ড করা হয়নি। পরে মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
১২০ কোটি টাকার পাথর লুট :২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা হয়। ২০১২ সালে করা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর জাফলং থেকে বালু ও পাথর কোয়ারির ইজারা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে বছর বছর পাথর সম্পদ মজুতের বিষয়টি পরিমাপের মধ্যে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে সংরক্ষিত এলাকায় পাথরের পর্যবেক্ষণ চলে। সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই পরিমাপ অনুযায়ী জাফলংয়ে পাথর মজুত ছিল ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট। কিন্তু ৫ আগস্ট সেখানে ব্যাপক লুটপাট হয়ে যায় প্রায় ১ কোটি ঘনফুট পাথর। যার বর্তমান বাজার মূল্য শতকোটি টাকারও বেশি। এ সময় পাথরের সঙ্গে বালুও লুট করা হয়।