মোহামেডান ফুটবল দলে গত মৌসুমে যারা খেলেছেন এবার তাদের নিয়েই নতুন মৌসুমের জন্য দল গঠন করা হয়েছে। নতুন কাউকে নেওয়া হয়েছে কিনা সেই প্রশ্নে কোচ আলফাজ আহমেদ বলেন,‘নতুন কোনো ফুটবলার আছে নাকি। যারা বসুন্ধরায় চলে গেছেন তারা আগে থেকেই চলে গেছেন। একজন রাকিব দিয়ে তো বাংলাদেশ চলবে না। নতুন কোনো ফুটবলার আছে নাকি। দেশে প্লেয়ার সংকট। আর যারা জাতীয় দলের ফুটবলার আছেন তাদেরকে বসুন্ধরা কিংস নিয়ে গেছে।’
মোহামেডান কেন নেয়নি? আলফাজ বলেন, ‘বসুন্ধরা যে বাজেট নিয়ে দল গঠন করছে বাকি আট দশটা ক্লাবের পক্ষে কি সম্ভব? আমার তো মনে হয় না।’
ফেডারেশন কাপ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দেশের ফুটবলে বড় ধাক্কা দিয়েছিল মোহামেডান। সেই ধাক্কায় মোহামেডানের ফুটবলারদের নিয়ে টানাটানি পড়েছিল। বস্তা ভরা টাকা দেওয়ার মতো মোহামেডান নেই। লোকমান হোসেনরা বস্তা ভরা টাকা দিয়ে তারকাদের নিয়ে ২০০৬ সালে পেশাদার ফুটবলের প্রথম আসর, দ্বিতীয় আসর, তৃতীয় আসরেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তিন বারই রানার্সআপ হয়েছে।
আলফাজ মনে করেন এখন টাকা দেওয়াটাই বড় কথা না। যেখানে ভালো মানের খেলোয়াড় নেই, সেখানে টাকা ছড়িয়ে দিলেই তো হয় না। দেশে মানসম্পন্ন ফুটবলার নেই। খেলোয়াড় সংকট। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে দুই ম্যাচে রাকিব ম্যাচ সেরা হয়েছেন। একজন রাকিব দিয়েই তো দেশের ফুটবলের সব মাপকাঠি করা যায় না। ক্লাব ফুটবলের অনেক সংখ্যক খেলোয়াড় দরকার। খেলোয়াড় নেই বলেই বসুন্ধরা কিংস একাই বড় দল বানাচ্ছে। শেখ জামাল কিংবা শেখ রাসেলের পৃষ্ঠপোষক কারা। এক জায়গা থেকেই পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। তাহলে বসুন্ধরা কিংস যদি এক নম্বর দল বানাতে পারে শেখ জামাল কিংবা শেখ রাসেল কেন পারছে না। তারা কেন কিংসের ঘর ভেঙে খেলোয়াড় নিতে পারছে না। যেমনটি মোহামেডান-আবাহনী ভেঙে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ করা হয়েছিল ৯৪ সালে।
মোহামেডানের ফুটবলারদের দিকে চোখ ছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের। মোহামেডান সেটা হতে দেয়নি। কারণ সব প্লেয়ার চলে গেলে মোহামেডানের ঘর ফাঁকা হয়ে যেত মনে করছেন দলের কোচ আলফাজ আহমেদ। রাজিব, সাজ্জাদ, বাপ্পী—এই তিন জন চলে গেছেন। যারা চলে গেছেন তারা একাদশের ছিলেন না। আলফাজ জানালেন যারা গেছেন তারা একাদশের ফুটবলার ছিলেন না। প্রয়োজন হলে খেলানো হয়েছে। আর যারা আছেন তারা পুরোনোই। নতুন যারা এসেছেন উল্লেখ করার মতো না। সবাই এখানে নিজেদেরকে উজাড় করে দিয়ে একাদশে ঢুকতে চান। সেই লড়াই হচ্ছে এখন।’ আরো এক মাস আগে মোহামেডান অনুশীলন শুরু করেছে। তাদের মাঠ সংকট থাকলেও প্রস্তুতিতে থেমে নেই মোহামেডান।’
মোহামেডানের টার্গেট কী? আলফাজ বললেন,‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার টার্গেট নাই। এটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল না হলেও আমি সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমার টার্গেট একটু একটু করে আগাব। এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা বলতে পারলাম না। সেটা করতে চাই না। আমরা অনেক বছর পর এবার চতুর্থ হয়েছি। তৃতীয় দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে চাই। গত বারের বসুন্ধরা এবার আরো বেশি শক্তিশালী তারা।’
গত লিগের মাঝপথে মোহামেডানের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের সহকারী কোচ থেকে মূল কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় আলফাজকে। লিগের তখন মোহামেডানের পয়েন্ট ১২। রেলিগেশনের পথে। সেই দলটাকে ২২ পয়েন্ট এনে দিলেন। আলফাজ মনে করেন আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগে যদি ২২ থাকত আর আমার সময়ে যদি ২২ পয়েন্ট হতো, তাতে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ফাইটে থাকত মোহামেডান। ১২ পয়েন্ট থাকাকালীন ম্যাচ জিতেছিল ৩টা। আর ২২ পয়েন্ট পাওয়ার লড়াই মোহামেডান ম্যাচ জিতেছিল ৬টা। তারপর ফেডারেশন কাপে কোনো ম্যাচ হারিনি।
আলফাজ বললেন,‘আমরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটাই আমাদের দলকে উজ্জীবিত করেছে যে, আমরাও ট্রফি পেতে পারি। আরেকটু চেষ্টা করলে আরো ভালো হতে পারে। ফরেন প্লেয়ার এসেছেন তিন জন। আগের তিন জন সুলাইয়াম, সানডে, মোজাফফর আছে। আরো তিন জন আসছে একজন নাইজেরিয়া থেকে টনি, ঘানা থেকে সিদ্দিক এবং এর মধ্যে আবার ফিরেছেন জাপানের উরুনাতাকা।’ এশিয়ান একজন ফুটবলার খেলানোর নিয়ম রয়েছে। উজবেকিস্তানের মোজাফফর এবং জাপানের উরু নাকাতা এর আগে মোহামেডান অধিনায়ক ছিলেন।