সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন

পাংশায় পদ্মার চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৪
আপডেট : সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

‘আল্লাহ বাঁচিয়েছে তাই এখনো বেঁচে আছি। যে সাপ কামড়িয়েছে শুনলাম, এই সাপ কামড়ালে মানুষ বাঁচে না। সেদিন সকালে পাট নিড়াতে যাই। ঘাস কাটার সময় ডান হাতের বুড়ো নখের ওপরে কি যেন কামড় দেয়। তাকিয়ে দেখি সাপ। তখনই হাতের কাচি দিয়ে সাপটি মেরে, গামছা দিয়ে হাত বেঁধে সাপ নিয়ে পাংশা হাসপাতালে চলে যাই। হাসপাতালের ডাক্তাররা সাপ দেখে বললেন, এটা রাসেল ভাইপার। সেখানে এর চিকিৎসা নেই। আমাকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে চলে যেতে বলেন। পরে সাপ নিয়েই কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চলে যাই। সেখানে চার দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে আসি। আমি এখনো গায়ে আগের মতো শক্তি পাই না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষক জাহিদ প্রামাণিক।

সরেজমিনে হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এই দুই ইউনিয়নের নদীপাড়ের কয়েকটি গ্রাম ও চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বিষাক্ত রাসেল ভাইপারসহ বিভিন্ন ধরনের সাপ। নদীর পাড়, জেলের জালে, আখখেত, পাটখেতসহ বিভিন্ন ফসলিজমিতে প্রায়ই দেখা মিলছে এসব সাপ। সাপের ভয়ে দুই ইউনিয়নের অনেক কৃষক খেতে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সাপের উপদ্রব কমাতে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

চরপাড়া গ্রামের কৃষক আজাদ বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝেই সাপ দেখি। কখনো কখনো মেরেও ফেলি। আমরা তো জানি না এইগুলো বিষাক্ত রাসেল ভাইপার। এখন খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি।’ আরেক কৃষক আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রচুর সাপ। আজও মাছ ধরা জালের ভেতর থেকে তিনটে সাপ মারা হয়েছে। আমরা ঐ সাপ চিনি না, নতুন সাপ।’ তিনি আরও বলেন, নদীর পাড়ে যাদের বাড়িঘর, তারা তো বেশি বিপদে আছে। প্রশাসন যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বর্ষায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে।

হাবাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আল মামুন খান বলেন, ‘সম্প্রতি চরপাড়া গ্রামে এক কৃষককে সাপে কামড়ে ছিল। সে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ। আমার এই ইউনিয়নের বড় একটা অংশ নদীর পাড়ে। ফলে বর্ষায় সাপের উপদ্রব বাড়ে, কারণ পানির সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপ ভেসে আসে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নদীপাড়ের মানুষদের সচেতন থাকতে বলেছি। এছাড়া ঐসব এলাকাগুলোতে উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার করব।’ পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘হাবাসপুর এবং বাহাদুরপুর এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে, এটা আমরা শুনেছি। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। তারা যেন মাঠে কাজের সময় পাহারার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও সাপ তাড়াতে তারা কার্বলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন।’

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক বলেন, ‘চরাঞ্চলে বিশেষ করে বর্ষায় সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ বিষয়ে আমরা ঐ এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার করব।’ রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ইব্রাহিম টিটোন বলেন, ‘রাজবাড়ীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ সাপের বিষের প্রতিষেধক ছিল, তার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা নতুন প্রতিষেধক সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। যদি কেউ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় সে যেন হাসপাতালে চলে আসে। যদি বিষাক্ত সাপে কামড় দেয়, তাহলে আমরা ঐসব রোগীকে ফরিদপুর অথবা কুষ্টিয়াতে পাঠিয়ে দেব। আর এর মধ্যে সাপের বিষের প্রতিষেধক চলে এলে জেলার হাসপাতালগুলোতেই চিকিৎসা দিতে পারবো।’


এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD