ঢাকা ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ও গুতেরেসের দিনটি যেভাবে গেল আবরার ফাহাদ হত্যা : হাইকোর্টের রায় রোববার ট্রাকচাপায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ৩ দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের দায়িত্বে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর ট্রাম্পের অনুরোধের পর ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান পুতিনের মার্কিন জিম্মিকে মুক্তির প্রস্তাব হামাসের, প্রত্যাখান ইসরাইলের টানা দুই দিন ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস কাশ্মীরের দুটি সংগঠনকে বেআইনি ঘোষণা, ভারতকে তীব্র নিন্দা পাকিস্তানের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বড় হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতি, ব্যয় বাড়ছে আইসিটি খাতে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি ঝরতে পারে যেসব অঞ্চলে

ফেনীতে মিটিং করে হামলার সিদ্ধান্ত নেন নিজাম হাজারীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৩০:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২০ বার পঠিত

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতারা মিটিং করে হামলার কথা জানিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত মুস্তারির আদালতে জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার তারেক হোসেন (১৯) ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর চাড়ীপুর গ্রামের আলিমু‌দ্দিন এলাকার মো. নুর হোসেনের ছেলে। স্থানীয় রাজনীতিতে ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হকের অনুসারী। গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরের রাজাঝি দীঘিরপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারেক হোসেন হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি পুলিশকে জানান, গত ৪ আগস্ট ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি মিটিং করে ছাত্র আন্দোলনে হামলার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ৩০০-৪০০ নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেন। আসামি তারেক যে দলে ছিলেন, সে দলে অর্ণব, রাকিবসহ ৯ জন গুলি চালিয়েছিলেন বলে জানান।

এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, আসামি নিজে হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জবানবন্দিতে। এ ছাড়া অস্ত্র হাতে কারা ছিলেন, কারা গুলি চালিয়েছেন, কার নির্দেশে তারা এসব করেছেন, জবানবন্দিতে সব উঠে এসেছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপাল এলাকায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বিচার গুলি ছুড়লে কলেজশিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রাজনৈতিক আতঙ্কে মাহবুবুলকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না করে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ৭ আগস্ট তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে, সেদিন সন্ধ্যায়ই মাহবুবুল মারা যান। নিহত মাহবুবুল হাসান সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের নোমান হাসানের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়ার আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ ঘটনায় নিহত মাহবুবুলের ভাই মো. মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালালে ঘটনাস্থলে এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ৯ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এ পর্যন্ত ৮টি হত্যা ও ১৩টি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে।

ট্যাগস :

ফেনীতে মিটিং করে হামলার সিদ্ধান্ত নেন নিজাম হাজারীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা

আপডেট সময় : ১১:৩০:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতারা মিটিং করে হামলার কথা জানিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত মুস্তারির আদালতে জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার তারেক হোসেন (১৯) ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর চাড়ীপুর গ্রামের আলিমু‌দ্দিন এলাকার মো. নুর হোসেনের ছেলে। স্থানীয় রাজনীতিতে ফাজিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হকের অনুসারী। গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরের রাজাঝি দীঘিরপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারেক হোসেন হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি পুলিশকে জানান, গত ৪ আগস্ট ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি মিটিং করে ছাত্র আন্দোলনে হামলার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী ৩০০-৪০০ নেতাকর্মী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় অংশ নেন। আসামি তারেক যে দলে ছিলেন, সে দলে অর্ণব, রাকিবসহ ৯ জন গুলি চালিয়েছিলেন বলে জানান।

এ বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, আসামি নিজে হামলায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন জবানবন্দিতে। এ ছাড়া অস্ত্র হাতে কারা ছিলেন, কারা গুলি চালিয়েছেন, কার নির্দেশে তারা এসব করেছেন, জবানবন্দিতে সব উঠে এসেছে। জড়িত বাকি ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপাল এলাকায় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বিচার গুলি ছুড়লে কলেজশিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রাজনৈতিক আতঙ্কে মাহবুবুলকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না করে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ৭ আগস্ট তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে, সেদিন সন্ধ্যায়ই মাহবুবুল মারা যান। নিহত মাহবুবুল হাসান সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের নোমান হাসানের ছেলে। তিনি ছাগলনাইয়ার আবদুল হক চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ ঘটনায় নিহত মাহবুবুলের ভাই মো. মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয়ের ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালালে ঘটনাস্থলে এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ৯ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এ পর্যন্ত ৮টি হত্যা ও ১৩টি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে।