বরিশালের আরিফ ফিলিং স্টেশন দখলের নেপথ্যে

- আপডেট সময় : ০৯:৩৪:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬২৯ বার পঠিত
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ হিসাবে বরিশালের গৌরনদীতে ব্যাপক প্রভাব ছিল উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন মুন্সীর।
ফরহাদ মুন্সি ছিলেন আওয়ামীলীগের উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নানা অপকর্মে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতেন হারিছ । মো. হারিছুর রহমান হারিছ ছিলেন গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও গৌরনদী পৌরসভার রাতের ভোটের তিন বারের মেয়র,ক্ষমতার শেষ ক বছর হারিছের সাথে মিলে যায় ফরহাদ মুন্সি, আর তাকে ঠেকায় কে ! ফরহাদ মুন্সির প্রভাব এতই ছিল যে দখিনের মাদকের সব চেয়ে বড় ডিলার হিরা মাঝি মানিক মাঝি গংদের উত্থান হয । মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরচিতি লাভকরে গৌরনদী। হিরা মানিক মাঝি এখনো বহাল তবিয়তে মাদক বিক্রি করে চলেছে !
ফরহাদ মুন্সির কারনে ক্ষতির কারন হয়েছেন অনেক মানুষ। ৫ আগস্টের পর ফরহাদ মুন্সি পালিয়ে যান। এরপর মুখ খুলতে শুরু করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
ফরহাদের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছেন হারুন অর রশিদ বেপারী নামক এক পেট্রোল পাম্প ব্যবাসয়ী। তিনি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তারকুপি এলাকায় অবস্থিত আরিফ ফিলিং স্টেশনের মালিক।
তাঁর স্বজনরা জানিয়েছেন, ফরহাদ মৃন্সি প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে জাল কাগজপত্র বানিয়ে ওই ফিলিং স্টেশনের ৬২ শতাংশের মালিকানা বাগিয়ে নেন। এমন ঘটনায় স্ট্রোক করেন হারুন বেপারী । পরে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন হারুন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন তিনি ।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো.হারিছুর রহমান সহ বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
এসব জানিয়ে হারুন বেপারীর মেয়ে সুমাইয়া পপি বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা পাতানো সালিশের নামে প্রহসন করেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকেই ফরহাদ মুন্সি আত্মগোপনে। কিন্তু তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মানিক মাঝি ও হিরা মাঝি নামে দুই সহোদর প্রতি মাসে ফিলিং স্টেশনের লাভের ৬২ ভাগ নিয়ে যাচ্ছেন। শতভাগ মালিকানা ফিরে পেতে বাবার পক্ষে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন পপি।
সুমাইয়া পপির ভাষ্য, তাঁর বাবা হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ফিলিং স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু করেন। এ সময় টরকি বাসস্ট্যান্ড এলাকার সলেমন হাওলাদারের কাছ থেকে সুদে ১০ লাখ টাকা ধার নেন। এ নিয়ে বিরোধ বাধলে আমার বাবাকে (হারুনকে) সহায়তার নামে সুধি ছলেমানের অভিযোগ নিয়ে আসা ওই এস আইর মাধ্যমে এগিয়ে আসেন ফরহাদ মুন্সী। টাকার সংকট মেটাতে তিনি ফিলিং স্টেশনে অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দেন। আলোচনায় ফরহাদ, হারুন ও পপির স্বামী আজমল আলম সিদ্দিকী ৩৩ দশমিক ৩৩ ভাগ হারে অংশীদার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কয়েক দিনের মধ্যে ফরহাদ নতুন ফাঁদ পাতেন। তিনি ওই বছরের মার্চ মাসে হারুনকে বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে ফিলিং স্টেশন চালু না করলে লাইসেন্স বাতিল হবে। ইতোমধ্যে ১ কোটি ১০ লাখ খরচ করে ফেলেছেন। লাইসেন্স বাতিল হলে পুরো টাকা গচ্চা যাবে। পপির ভাষ্য, এসব খরচের কোনো হিসাবই দেননি ফরহাদ। ২০১৯ সালের ১১ জুলাই তাঁর বাবাকে ফরহাদের অটো রাইস মিলে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে আগেই লিখে রাখা চুক্তিপত্রে চাপ নিয়ে হারুনের কাছ থেকে সই নেন ফরহাদ। পরে তারা দেখতে পান, ওই চুক্তিপত্রে ফরহাদের ৫০ ভাগ এবং হারুন ও আজমল আলম সিদ্দিকীর ২৫ ভাগ করে অংশীদারত্ব দেখানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের জুনে আরেকটি চুক্তিপত্র সামনে আনেন ফরহাদ। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হারুন ও ফরহাদ সাড়ে ৩৭ ভাগ করে এবং ফরহাদের লোক হিসেবে পরিচিতি মজিবর রহমান মাঝি ২৫ ভাগের অংশীদার। এ চুক্তিপত্রে আজমল সিদ্দিকীর মালিকানা নেই। কয়েকদিন পরে ক্রয়সূত্রে ফরহাদের অংশের মালিকানা দাবি করেন মজিবরের ছেলে হিরা মাঝি।
ওই চুক্তিপত্রটি হারুনের সই জাল করে করা হয় বলে অভিযোগ করেন পপি। তিনি বলেন, সব কাগজে তাঁর বাবা বাংলায় সই করেছেন। কিন্তু ভুয়া চুক্তিপত্রে ইংরেজিতে সই দেওয়া। কোনো দিন-তারিখও সইয়ে উল্লেখ নেই। আইন অনুযায়ী চুক্তিপত্রে ইংরেজিতে সই গ্রহণযোগ্য নয়। ভুয়া চুক্তির বিষয়টি জানার পরই স্ট্রোক করেন পপির বাবা হারুন। তিনি এখন বাকশক্তিহীন।
ফরহাদের অংশের ক্রয়সূত্রে অংশীদার দাবি করা হিরা মাঝির ভাষ্য, তিনি প্রায় তিন বছর আগে ফরহাদ মুন্সীর কাছ থেকে ওই অংশ কিনেছেন। তাঁর বাবা মজিবর কীভাবে ২৫ ভাগের অংশীদার হলেন– জানতে চাইলে দাবি করেন, হারুন অর রশিদই গোপনে জামাতাকে বাদ দিয়ে মজিবরের কাছে ২৫ ভাগ বিক্রি করেন।
আত্মগোপনে থাকা ফরহাদ মুন্সীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর স্ত্রী উম্মে সালমা হালিমা বলেন, ২০১৯ সাল থেকেই তিনি ঢাকায় থাকেন। গৌরনদীতে স্বামীর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে কিছু জানেন না। একটি ফিলিং স্টেশন আছে বলে শুনেছেন, বিস্তারিত বলতে পারছেন না।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু আব্দুল্লাহ খান বলেন, তাঁর এলাকায় ফিলিং স্টেশন দখল করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ মুন্সীকে চেনেন। আইনবহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।