টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। অবিরাম বৃষ্টির ফলে জেলার নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি হলে তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
অন্যদিকে ভারী বর্ষণ কমে যাওয়ায় ও রোদ উঠায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি উজানে কমলেও ভাটিতে বাড়ছে। এতে মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলের ফলে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ২২৫ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ১৮৮ সেন্টিমিটার, ধরলায় ১৮১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচে এবং তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত এবং উজানে সীমান্তবর্তী
ভারতীয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী কয়েক দিন ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা থাকলেও কুড়িগ্রামে এ নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার পূর্বাভাস নেই। ফলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বন্যারও পূর্বাভাস নেই।
তিস্তা অববাহিকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তা মেরামতে কাজ চলছে জানিয়ে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, জেলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নদী ভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে। প্রচুর পরিমাণ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
এদিকে ঝিনাইগাতীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও সদর বাজার থেকে পানি নদীতে নেমে গেছে। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যাও কমেছে। তবে উজানে পানি কমার পর শুক্রবার সকাল থেকে উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের হাঁসলিগাঁও, জুলগাঁও, রাঙ্গামাটিয়া ও দেবোত্তরপাড়া এবং হাতিবান্ধা ইউনিয়নের হাতিবান্ধা, ঘাগড়া, বেলতৈল, মারুয়াপাড়া, কামারপাড়া ও সরকারপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের ফলে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই পাহাড়ি ঢলের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ভাটি এলাকায় পানি ঢুকছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়া ১০ টন জিআর চাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।