ঢাকা ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশকে কাছে টানার চেষ্টা করছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:১৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৭ বার পঠিত

ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশকে কাছে টানতে সক্রিয় হয়েছে চীন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের সফরে চীন গেছে। ঐ দলে রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরা রয়েছেন। প্রতিনিধিদলের এক নেতা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম  নিশ্চিত করেছেন, সফরকালে তারা চীনের সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে।

বেইজিংয়ে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল মঈন খান বলেন, এটি মূলত একটি সৌজন্যমূলক সফর, যা বেইজিংয়ের উদ্যোগে হচ্ছে। প্রতিনিধিদলে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলের নেতা ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েক জন সদস্য রয়েছেন।

গত আগস্টে এক গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছে।

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ভারতবান্ধব নীতি অনুসরণ করলেও চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু তার পতনের পর চীন বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব আরও বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা, এমনকি ইসলামি দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বেইজিং সফর করেন এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক শূন্যতা এবং ভারতের প্রভাবের অনুপস্থিতিতে বেইজিং প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে তার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের ৭০ শতাংশ আসে চীন থেকে। বেইজিংয়ের সদিচ্ছার তুলনায় গত ছয় মাসে বরং ভারত ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যোগাযোগ কমেছে। বিএনপি ও সরকারের উপদেষ্টারা ভারতের সমালোচনা করেছে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। এই সমালোচনা দিল্লি থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

দুই শক্তিধর দেশ যখন প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়াই করছে তখন নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের পথ অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। বেইজিং সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো চীনা বিশ্লেষক ঝোউ বো বলেন, পুরো উপমহাদেশ দিল্লির প্রভাব বলয়ে থাকবে এটা বিবেচনা করা ভারতের উচিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই মনোভাব ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ট্যাগস :

বাংলাদেশকে কাছে টানার চেষ্টা করছে চীন

আপডেট সময় : ১০:১৩:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশকে কাছে টানতে সক্রিয় হয়েছে চীন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের সফরে চীন গেছে। ঐ দলে রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরা রয়েছেন। প্রতিনিধিদলের এক নেতা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম  নিশ্চিত করেছেন, সফরকালে তারা চীনের সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে।

বেইজিংয়ে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল মঈন খান বলেন, এটি মূলত একটি সৌজন্যমূলক সফর, যা বেইজিংয়ের উদ্যোগে হচ্ছে। প্রতিনিধিদলে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলের নেতা ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েক জন সদস্য রয়েছেন।

গত আগস্টে এক গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের। এরপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছে।

শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ ভারতবান্ধব নীতি অনুসরণ করলেও চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু তার পতনের পর চীন বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব আরও বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা, এমনকি ইসলামি দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে। সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বেইজিং সফর করেন এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক শূন্যতা এবং ভারতের প্রভাবের অনুপস্থিতিতে বেইজিং প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে তার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জামের ৭০ শতাংশ আসে চীন থেকে। বেইজিংয়ের সদিচ্ছার তুলনায় গত ছয় মাসে বরং ভারত ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যোগাযোগ কমেছে। বিএনপি ও সরকারের উপদেষ্টারা ভারতের সমালোচনা করেছে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। এই সমালোচনা দিল্লি থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

দুই শক্তিধর দেশ যখন প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়াই করছে তখন নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের পথ অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। বেইজিং সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো চীনা বিশ্লেষক ঝোউ বো বলেন, পুরো উপমহাদেশ দিল্লির প্রভাব বলয়ে থাকবে এটা বিবেচনা করা ভারতের উচিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই মনোভাব ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।