ঢাকা ০৩:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয়ের জমি দখল করে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৯ বার পঠিত

রক্ষকই যখন ভক্ষক। এমন ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুলের জমি কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুলের সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও চিত্তরঞ্জন রায়, স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন ও রহিদুল ইসলাম রাফি।

অভিযোগ তদন্তে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শন করেন ইউএনও মোঃ তাজ উদ্দিন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে জমি দখল, আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

একাধিক ব্যক্তি কয়েকটি অভিযোগে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ তদন্ত করেন। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন তাঁরা।

সেই অভিযোগের সূত্রে সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের মাঠের পাশেই মন্দির নির্মাণ করেছেন সতীশ চন্দ্র রায়। পরে কৌশলে বেড়া দিয়ে স্কুলের অন্যান্য জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেন। এবং সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। সেই সঙ্গে স্কুলের জমিতেই দোকান নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়েছেন সতীশ। এই বাড়ি ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে তার বাড়ি আছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে জমি সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছিল স্কুলটি। স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্নে চিত্তরঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে ৮ আগস্ট ১৯৯৬ সালে ৩০২৮ নং দানপত্র দলিল মূলে বিভিন্ন দাগে ১ একর ৩০ শতাংশ জমি নিম্ন মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুকুলে দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত খানসামা থানাধীন ২নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া মৌজায় টংগুয়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবরে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার দুকুড়ী এলাকার গয়চাঁদ ব্রজবাসীর ছেলে হরেক চাঁদ ব্রজবাসী পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত নিজ দখলীয় মালিকানা জমি রেজিস্ট্রি দেয়।

সেই মোতাবেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমির খাজনা পরিশোধ করে ব্যবহার করে আসছে এবং জমির স্কেচ ম্যাপ দৃশ্যমান রয়েছে। কিন্তু ঐ বিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষক পদে সতীশ চন্দ্র রায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়ের নিয়োগপত্রের আলোকে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ তারিখে যোগদান করে অদ্যাবধি চাকুরী করে আসছেন। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণ না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়া স্বত্বেও বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়ের নামে সংশোধনী রেজিস্ট্রি না নিয়ে অন্য ওয়ারিশের কাছে নিয়মবহির্ভূত ভাবে সতীশ চন্দ্র রায় তার নিজ নামে ৪৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। এই পুরোনো খেলার মাঠে এখন আধাপাকা বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে ঐ সতীশ।

এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্কুলের নামীয় ২৭ শতক জমি নিয়ম না মেনেই গোপনে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়েছেন সতীশ। সেই জমিতে পুকুর খনন করে এবং বাড়ি নির্মাণ করে অভিযুক্তরা। স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম রাফি জানান, এই প্রধান স্কুলের জমিদখলসহ নানা অনিয়ম করেছে। দ্রুত তার অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায় কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই আমি জমি রেজিস্ট্রি নিয়েছি। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে খোদ স্কুলের জমি দখল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ইউএনও স্যার তদন্ত করছে। যদি আমার জমি না টিকে তাহলে তিনি যেটা করবেন সেটাই হবে। এখানে তো আর আমার কিছু বলার নাই। তবে স্কুলের জমি অন্যজনকে নিয়ম না মেনে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলা তো অনেক আগের ঘটনা। তখন এত জানা শোনা ছিল না, তাই হয়ে গেছে।  তবে রেজুলেশন করে চুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তাজ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :

বিদ্যালয়ের জমি দখল করে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি নির্মাণ

আপডেট সময় : ০১:৩০:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

রক্ষকই যখন ভক্ষক। এমন ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুলের জমি কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুলের সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও চিত্তরঞ্জন রায়, স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন ও রহিদুল ইসলাম রাফি।

অভিযোগ তদন্তে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শন করেন ইউএনও মোঃ তাজ উদ্দিন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে জমি দখল, আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

একাধিক ব্যক্তি কয়েকটি অভিযোগে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ তদন্ত করেন। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন তাঁরা।

সেই অভিযোগের সূত্রে সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে স্কুলে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের মাঠের পাশেই মন্দির নির্মাণ করেছেন সতীশ চন্দ্র রায়। পরে কৌশলে বেড়া দিয়ে স্কুলের অন্যান্য জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেন। এবং সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। সেই সঙ্গে স্কুলের জমিতেই দোকান নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়েছেন সতীশ। এই বাড়ি ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে তার বাড়ি আছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে জমি সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মাণ করা হয়েছিল স্কুলটি। স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্নে চিত্তরঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে ৮ আগস্ট ১৯৯৬ সালে ৩০২৮ নং দানপত্র দলিল মূলে বিভিন্ন দাগে ১ একর ৩০ শতাংশ জমি নিম্ন মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুকুলে দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত খানসামা থানাধীন ২নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া মৌজায় টংগুয়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবরে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার দুকুড়ী এলাকার গয়চাঁদ ব্রজবাসীর ছেলে হরেক চাঁদ ব্রজবাসী পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত নিজ দখলীয় মালিকানা জমি রেজিস্ট্রি দেয়।

সেই মোতাবেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমির খাজনা পরিশোধ করে ব্যবহার করে আসছে এবং জমির স্কেচ ম্যাপ দৃশ্যমান রয়েছে। কিন্তু ঐ বিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট প্রধান শিক্ষক পদে সতীশ চন্দ্র রায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়ের নিয়োগপত্রের আলোকে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ তারিখে যোগদান করে অদ্যাবধি চাকুরী করে আসছেন। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণ না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়া স্বত্বেও বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়ের নামে সংশোধনী রেজিস্ট্রি না নিয়ে অন্য ওয়ারিশের কাছে নিয়মবহির্ভূত ভাবে সতীশ চন্দ্র রায় তার নিজ নামে ৪৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। এই পুরোনো খেলার মাঠে এখন আধাপাকা বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছে ঐ সতীশ।

এছাড়া অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্কুলের নামীয় ২৭ শতক জমি নিয়ম না মেনেই গোপনে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়েছেন সতীশ। সেই জমিতে পুকুর খনন করে এবং বাড়ি নির্মাণ করে অভিযুক্তরা। স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম রাফি জানান, এই প্রধান স্কুলের জমিদখলসহ নানা অনিয়ম করেছে। দ্রুত তার অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায় কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই আমি জমি রেজিস্ট্রি নিয়েছি। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে খোদ স্কুলের জমি দখল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি ইউএনও স্যার তদন্ত করছে। যদি আমার জমি না টিকে তাহলে তিনি যেটা করবেন সেটাই হবে। এখানে তো আর আমার কিছু বলার নাই। তবে স্কুলের জমি অন্যজনকে নিয়ম না মেনে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলা তো অনেক আগের ঘটনা। তখন এত জানা শোনা ছিল না, তাই হয়ে গেছে।  তবে রেজুলেশন করে চুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তাজ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।