ঢাকা ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে মধ্যবিত্তদের খুশি করতে বাজেটে আয়কর ছাড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ২৬ বার পঠিত

ভারতে মধ্যবিত্তদের খুশি করার লক্ষ্যে এবং দিল্লি ও বিহারে ভোটের কথা মাথায় রেখে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। খবর ডয়চে ভেলের।

৭৭ মিনিটের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বেতনভোগী কর্মীদের জন্য বছরে ১২ লাখ ৭৫ হাজার পর্যন্ত আয়ের উপর কর লাগবে না।

ডয়চে ভেলে বলছে, এবার বাজেটে আয়কর কাঠামোর পরিবর্তন করা হয়েছে। চার লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর লাগবে না। চার থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আট থেকে ১২ শতাংশ হলে ১০ শতাংশ হারে, ১২ থেকে ১৬ লাখ আয়ের মানুষদের ১৫ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ হলে ২০ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ লাখ হলে ২৫ শতাংশ এবং তার বেশি হলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।

যাদের আয় বছরে ১২ লাখ, তাদের কর ধার্য হবে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু বিভিন্ন ছাড়ের সুয়োগ নিয়ে তারা ৬০ হাজার টাকা বাঁচাতে পারবেন। ফলে তাদের কর দিতে হবে না। আর স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৭৫ হাজার টাকা। তাই সবমিলিয়ে ১২ লাখ ৭৫ হাজার পর্যন্ত বেতনভোগীদের কর শূন্য হয়ে যাবে।

আগামী সপ্তাহে আয়কর বিল আনা হবে। সেখানে আয়করের নিয়ম অনেক সরল করা হবে বলে নির্মলা জানিয়েছেন।

দিল্লি ও বিহারের জন্য সুখবর

দিল্লিতে আর চারদিন পরেই বিধানসভা নির্বাচন। আর দিল্লির ভোটারদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয়, রাজ্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কর্মী আছেন। ফলে আরকর ছাড়ে তারা খুশি হবেন বলেই বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন।

ভোটের প্রচারে নেমে দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, ১২ লাখ আয়ের মানুষদের যাতে কর দিতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিজেপি নেতারা বলছেন, দিল্লিতে প্রধান বিরোধী নেতার দাবির থেকেও বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে।

বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হবে আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে। সেই বিহারের জন্য নির্মলা সীতারামন একাধিক সুখবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিহারে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজি’ তৈরি করা হবে।

এ ছাড়া পাটনা বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হবে। বিমানবন্দরের উন্নতির জন্য তিনি যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করেছেন। এ ছাড়া চারটি নতুন গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর এবং একটি ব্রাউনফিল্ড বিমানবন্দর নির্মাণের কথাও বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পাটনা আইআইটির পরিকাঠামোর উন্নতি করতে অর্থবরাদ্দ করেছেন চতিনি। এর ফলে আইআইটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়বে।

এবার বাজেট বক্তৃতাও তিনি দিয়েছেন বিহারের বিখ্যাত মধুবনী প্রিন্টের শাড়ি পরে।

মধ্যবিত্তদের সুবিধা কেন?

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ভারতের আর্থিক বিকাশে মধ্যবিত্তদের ভূমিকা বিশাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময়ই জাতিগঠনের কাজে মধ্যবিত্তদের ভূমিকাকে সম্মান জানান। তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আমরা কর কমাচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, মধ্যবিত্তরা প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে আছে। বাজেটে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে মধঘ্যবিত্তদের উপর চাপ কমবে।

মোদি বলেছেন, এই বাজেটের ফলে বিনিয়োগ বাড়বে। কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেছেন, ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে বিহারকে কিছু দেয়া হলেও অন্ধ্র প্রদেশকে কিছুই দেয়া হয়নি।

আর্থিক বৃদ্ধির হার আশানুরূপ নয়, টাকার দাম কমেছে, মধ্যবিত্তর উপর চাপ বেড়েছে, এই পরিপ্রেক্ষিতটা মাথায় রাখতে হবে।

মধ্যবিত্তরা দীর্ঘদিন ধরে আয়কর কমানোর দাবি জানাচ্ছিলেন। এবার বাজেটে তাদের খুশি করা হলো। তার পিছনে দিল্লি ও বিধানসভা নির্বাচন একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।

ট্যাগস :

ভারতে মধ্যবিত্তদের খুশি করতে বাজেটে আয়কর ছাড়

আপডেট সময় : ১০:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ভারতে মধ্যবিত্তদের খুশি করার লক্ষ্যে এবং দিল্লি ও বিহারে ভোটের কথা মাথায় রেখে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। খবর ডয়চে ভেলের।

৭৭ মিনিটের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বেতনভোগী কর্মীদের জন্য বছরে ১২ লাখ ৭৫ হাজার পর্যন্ত আয়ের উপর কর লাগবে না।

ডয়চে ভেলে বলছে, এবার বাজেটে আয়কর কাঠামোর পরিবর্তন করা হয়েছে। চার লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর লাগবে না। চার থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আট থেকে ১২ শতাংশ হলে ১০ শতাংশ হারে, ১২ থেকে ১৬ লাখ আয়ের মানুষদের ১৫ শতাংশ, ১৬ থেকে ২০ হলে ২০ শতাংশ, ২০ থেকে ২৪ লাখ হলে ২৫ শতাংশ এবং তার বেশি হলে ৩০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।

যাদের আয় বছরে ১২ লাখ, তাদের কর ধার্য হবে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু বিভিন্ন ছাড়ের সুয়োগ নিয়ে তারা ৬০ হাজার টাকা বাঁচাতে পারবেন। ফলে তাদের কর দিতে হবে না। আর স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৭৫ হাজার টাকা। তাই সবমিলিয়ে ১২ লাখ ৭৫ হাজার পর্যন্ত বেতনভোগীদের কর শূন্য হয়ে যাবে।

আগামী সপ্তাহে আয়কর বিল আনা হবে। সেখানে আয়করের নিয়ম অনেক সরল করা হবে বলে নির্মলা জানিয়েছেন।

দিল্লি ও বিহারের জন্য সুখবর

দিল্লিতে আর চারদিন পরেই বিধানসভা নির্বাচন। আর দিল্লির ভোটারদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয়, রাজ্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত কর্মী আছেন। ফলে আরকর ছাড়ে তারা খুশি হবেন বলেই বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন।

ভোটের প্রচারে নেমে দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, ১২ লাখ আয়ের মানুষদের যাতে কর দিতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিজেপি নেতারা বলছেন, দিল্লিতে প্রধান বিরোধী নেতার দাবির থেকেও বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে।

বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হবে আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে। সেই বিহারের জন্য নির্মলা সীতারামন একাধিক সুখবর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিহারে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড টেকনোলজি’ তৈরি করা হবে।

এ ছাড়া পাটনা বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হবে। বিমানবন্দরের উন্নতির জন্য তিনি যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করেছেন। এ ছাড়া চারটি নতুন গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর এবং একটি ব্রাউনফিল্ড বিমানবন্দর নির্মাণের কথাও বলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পাটনা আইআইটির পরিকাঠামোর উন্নতি করতে অর্থবরাদ্দ করেছেন চতিনি। এর ফলে আইআইটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়বে।

এবার বাজেট বক্তৃতাও তিনি দিয়েছেন বিহারের বিখ্যাত মধুবনী প্রিন্টের শাড়ি পরে।

মধ্যবিত্তদের সুবিধা কেন?

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ভারতের আর্থিক বিকাশে মধ্যবিত্তদের ভূমিকা বিশাল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময়ই জাতিগঠনের কাজে মধ্যবিত্তদের ভূমিকাকে সম্মান জানান। তাদের অবদানের কথা স্মরণ করে আমরা কর কমাচ্ছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, মধ্যবিত্তরা প্রধানমন্ত্রীর হৃদয়ে আছে। বাজেটে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাতে মধঘ্যবিত্তদের উপর চাপ কমবে।

মোদি বলেছেন, এই বাজেটের ফলে বিনিয়োগ বাড়বে। কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেছেন, ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে বিহারকে কিছু দেয়া হলেও অন্ধ্র প্রদেশকে কিছুই দেয়া হয়নি।

আর্থিক বৃদ্ধির হার আশানুরূপ নয়, টাকার দাম কমেছে, মধ্যবিত্তর উপর চাপ বেড়েছে, এই পরিপ্রেক্ষিতটা মাথায় রাখতে হবে।

মধ্যবিত্তরা দীর্ঘদিন ধরে আয়কর কমানোর দাবি জানাচ্ছিলেন। এবার বাজেটে তাদের খুশি করা হলো। তার পিছনে দিল্লি ও বিধানসভা নির্বাচন একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।