ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়লেও দাম কমছে না
- আপডেট সময় : ১০:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫ ১৬ বার পঠিত
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসের চাহিদা মেটাতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। গত ছয় মাসে যে পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে তাতে রমজান মাস পর্যন্ত পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। সম্প্রতি শুল্ক প্রত্যাহারের পর আমদানিকারকরা প্রচুর এলসি করেছে। এতে বুকিং দেওয়া পণ্য রমজান মাসের অনেক আগেই দেশে এসে পৌঁছবে। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে শুল্ক সুবিধার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছে না। অনেক পণ্যের দাম এখনো আগের মতো চড়া।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আগে দেশের বৃহৎ চার-পাঁচটি করপোরেট হাউজ ভোগ্যপণ্যের আমদানি করেছে। এখন এতোদিন মাঝারি পর্যায়ের যেসব ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতায় ঠিকতে না পেরে কোণঠাসায় ছিলেন তারা এখন পণ্য আমদানিতে সক্রিয় হয়েছে। তারাও কয়েক জন মিলে এলসি করছে। ফলে আমদানিতে ভারসাম্য ফিরে আসায় করপোরেট হাউজগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ভেঙে গেছে। ভোগ্যপণ্যের উপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
পবিত্র রমজান মাসে চাহিদা বাড়ে এমন ১১ ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। পণ্যগুলো হচ্ছে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর। তবে এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি মার্জিন সুবিধা দিচ্ছে। যেসব আমদানিকারকদের লেনদেনে স্বচ্ছতা রয়েছে তাদের এলসির ক্ষেত্রে ব্যাংকের সুবিধা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা গত ১ অক্টোবর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য ৪৫২টি এলসি করেছে। এসব এলসির বিপরীতে পণ্যের মধ্যে রয়েছে গম ৭৫ হাজার ১০৬ মেট্রিক টন, খেজুর ৩৫ হাজার ৫৪৬ টন, ছোলা ৩৫ হাজার ৫৪৬ টন, সয়াবিন ৩১ হাজার ১৪৩ টন, পাম অয়েল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৩৩ টন, মশুরডাল ১ হাজার ৫০ টন, চিনি ৮ হাজার ৯৪৩ টন। এসব এলসির বাইরে ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ এসব পণ্য দেশে এসে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. শাহ আলম বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করে দ্রুত আমরা ছাড়পত্র দিয়ে দিচ্ছি। গত নভেম্বরের চেয়ে বেশি পণ্য এসেছে।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানি বাড়ার কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। এতে পণ্যের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। সামনে আরও কমবে। এলসি নিয়ে ব্যাংকগুলো আগে কিছু সমস্যা করলেও এখন এলসিতে সমস্যা হচ্ছে না।’
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দেখা গেছে ছোলা ভালো মানের প্রতিমণ ৩ হাজার ৯০০ টাকা, মশুর ডাল মণ ৪ হাজার টাকা, সয়াবিন মণ ৬ হাজার ৫০০ টাকা, পামঅয়েল মণ ৬০১০ টাকা, চিনি ৪ হাজার ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছে প্রতিটি পণ্যের দাম আগের চেয়ে মণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পর যে পরিমাণ দাম কমার কথা তার প্রভাব বাজার পড়ছে না। খুচরা বাজারে এখনো দাম চড়া। অনেক পণ্য শুল্ক প্রত্যাহারের আগের দরে বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে হলে এখন থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে।