ঢাকা ১২:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ সব জাতিগোষ্ঠী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫০:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪ ১১ বার পঠিত

মিয়ানমারে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার এখন কঠিন বিপদের মধ্যে আছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ। বিদ্রোহীরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে দিন দিনই। এ পরিস্থিতির মধ্যেই বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে এখন যুক্ত হচ্ছেন মুসলিম সদস্যরাও। 

দক্ষিণ মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পাহাড়। এসব পাহাড়ে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সদস্যদের বসবাস। এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহীরা বসিয়েছে চেকপোস্ট। তারা জান্তা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দিকে যাওয়া বিভিন্ন যানবাহন, পণ্যবাহী ট্রাক ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ২০২১ সালের পর থেকে এই অঞ্চলটি কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) দখলে রয়েছে। কারেন বিদ্রোহীদের অধিকাংশ সদস্যই বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। বর্তমানে তাদের মধ্যে মুসলিম সৈন্যরাও যুক্ত হয়েছেন। কেএনইউর তৃতীয় কোম্পানির সদস্যরা সবাই মুসলিম। এতে রয়েছেন ১৩০ মুসলিম যোদ্ধা।

কারেন বিদ্রোহীদের মুসলিম কোম্পানির প্রধান মোহাম্মদ আইশার। ৪৭ বছর বয়সী এই যোদ্ধা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে লড়ছেন। তিনি বলেন, তানিনথারিতে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সব গোষ্ঠীই এখানে ঐক্যবদ্ধ।

তাঁর মতে, দেশের ক্ষমতায় যতদিন সামরিক বাহিনী থাকবে, ততদিন স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলো নিপীড়নের শিকার হতেই থাকবে। তিনি মনে করেন, বিদ্রোহীদের মধ্যে সব জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা থাকলে তা আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে এবং জান্তার নিপীড়ন থেকে রক্ষা মিলবে।

তানিনথারিতে যেসব মুসলিম তরুণ-তরুণী কারেন বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন, তাদের মধ্যে কিছু আরব বংশোদ্ভুত, কিছু পারস্য, আবার কিছু ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রয়েছেন। তাছাড়া বার্মিজ ও মালয় মুসলিমও তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। এসব যোদ্ধা মূলত অল বার্মা মুসলিম লিবারেশন আর্মির (এবিএমএলএ) হয়ে লড়াই করছেন।

তানিনথারিতে প্রায়ই মুসলিম এতিহ্যবাহী পোশাক পরা তরুণ-তরুণী দেখতে পাওয়া যায়। মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজান ও কোরআন পাঠের সুর। এমনকি কারেন বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতেও মুসলিম সদস্যরা মাদুর বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। আর পবিত্র রমজান মাসে যোদ্ধারা রোজাও রাখেন। নিয়মিত নামাজে অংশ নেন।

ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিয়ানমারের মুসলিমদের সম্পর্ক সর্বদা তিক্ত। কারণ, যারাই দেশটির ক্ষমতায় আসে, তারা বৌদ্ধ সংস্কৃতির জন্য মুসলিমদের মারাত্মক হুমকি বলে মনে করে। এ কারণে শত শত বছর ধরে মিয়ানমারের মুসলিমরা নির্যাতিত। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। তবে কারেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মুসলিমরা শান্তিতে থাকতে পারে।

জাতিগত সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে সাউথ বলেন, মিয়ানমারে মুসলমানরা যুগ যুগ ধরে সহিংসতার শিকার। ২০২১ সালে জান্তা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়েছে। মুসলিমরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিচ্ছে। তারা যুদ্ধেও অংশ নিচ্ছে।

ট্যাগস :

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ সব জাতিগোষ্ঠী

আপডেট সময় : ১২:৫০:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

মিয়ানমারে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার এখন কঠিন বিপদের মধ্যে আছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তারা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি আরও খারাপ। বিদ্রোহীরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে দিন দিনই। এ পরিস্থিতির মধ্যেই বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে এখন যুক্ত হচ্ছেন মুসলিম সদস্যরাও। 

দক্ষিণ মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পাহাড়। এসব পাহাড়ে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সদস্যদের বসবাস। এই এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহীরা বসিয়েছে চেকপোস্ট। তারা জান্তা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দিকে যাওয়া বিভিন্ন যানবাহন, পণ্যবাহী ট্রাক ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ২০২১ সালের পর থেকে এই অঞ্চলটি কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) দখলে রয়েছে। কারেন বিদ্রোহীদের অধিকাংশ সদস্যই বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। বর্তমানে তাদের মধ্যে মুসলিম সৈন্যরাও যুক্ত হয়েছেন। কেএনইউর তৃতীয় কোম্পানির সদস্যরা সবাই মুসলিম। এতে রয়েছেন ১৩০ মুসলিম যোদ্ধা।

কারেন বিদ্রোহীদের মুসলিম কোম্পানির প্রধান মোহাম্মদ আইশার। ৪৭ বছর বয়সী এই যোদ্ধা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে লড়ছেন। তিনি বলেন, তানিনথারিতে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সব গোষ্ঠীই এখানে ঐক্যবদ্ধ।

তাঁর মতে, দেশের ক্ষমতায় যতদিন সামরিক বাহিনী থাকবে, ততদিন স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলো নিপীড়নের শিকার হতেই থাকবে। তিনি মনে করেন, বিদ্রোহীদের মধ্যে সব জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা থাকলে তা আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে এবং জান্তার নিপীড়ন থেকে রক্ষা মিলবে।

তানিনথারিতে যেসব মুসলিম তরুণ-তরুণী কারেন বিদ্রোহীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন, তাদের মধ্যে কিছু আরব বংশোদ্ভুত, কিছু পারস্য, আবার কিছু ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম রয়েছেন। তাছাড়া বার্মিজ ও মালয় মুসলিমও তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। এসব যোদ্ধা মূলত অল বার্মা মুসলিম লিবারেশন আর্মির (এবিএমএলএ) হয়ে লড়াই করছেন।

তানিনথারিতে প্রায়ই মুসলিম এতিহ্যবাহী পোশাক পরা তরুণ-তরুণী দেখতে পাওয়া যায়। মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজান ও কোরআন পাঠের সুর। এমনকি কারেন বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতেও মুসলিম সদস্যরা মাদুর বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন। আর পবিত্র রমজান মাসে যোদ্ধারা রোজাও রাখেন। নিয়মিত নামাজে অংশ নেন।

ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে মিয়ানমারের মুসলিমদের সম্পর্ক সর্বদা তিক্ত। কারণ, যারাই দেশটির ক্ষমতায় আসে, তারা বৌদ্ধ সংস্কৃতির জন্য মুসলিমদের মারাত্মক হুমকি বলে মনে করে। এ কারণে শত শত বছর ধরে মিয়ানমারের মুসলিমরা নির্যাতিত। তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। তবে কারেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে মুসলিমরা শান্তিতে থাকতে পারে।

জাতিগত সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে সাউথ বলেন, মিয়ানমারে মুসলমানরা যুগ যুগ ধরে সহিংসতার শিকার। ২০২১ সালে জান্তা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়েছে। মুসলিমরা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিচ্ছে। তারা যুদ্ধেও অংশ নিচ্ছে।