যৌথভাবে টিটিপি দমন উদ্যোগে একমত ইসলামাবাদ-কাবুল

- আপডেট সময় : ১১:১৮:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৩২ বার পঠিত
আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানো নিয়ে তালেবান সরকারের আপত্তির মধ্যেই শনিবার ইসলামাবাদ ও কাবুল একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছেছে। তারা সম্মানজনক ও সুশৃঙ্খলভাবে আফগান নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একমত হয়েছে।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের একদিনের কাবুল সফরে এই অগ্রগতি ঘটে। এটি ছিল তার প্রথম আফগানিস্তান সফর। উত্তেজনা প্রশমনে এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা পুনরায় শুরু করতে এ সফর অনুষ্ঠিত হয়।
দার আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা করেন। আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক উঠে আসে, বিশেষ করে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, ট্রানজিট এবং আঞ্চলিক সংযোগ পুনঃগঠনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দার বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত না করা গেলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের সম্ভাবনা খোলা সম্ভব নয়।
তবে আলোচনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ইস্যুতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দুই দেশ যৌথভাবে টিটিপির হুমকি মোকাবিলায় একমত হয়েছে।
এই লক্ষ্যে একটি যৌথ কমিটি গঠিত হবে, যাতে গোয়েন্দা সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং কাবুলে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তারা থাকবেন। এই কমিটি আফগান অংশীদারদের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করবে।
ডার আফগান ‘অ্যাক্টিং’ প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দ এবং ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুস সালাম হানাফির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। তিনটি বৈঠকেই আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয় এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার পথ খোঁজা হয়।
শরণার্থী ইস্যু ও আফগান উদ্বেগ
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি আলোচনায় পাকিস্তানে আফগান অভিবাসীদের ‘জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন’ নিয়ে উদ্বেগ জানান এবং তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করতে ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানান।
উত্তরে ইসহাক দার বলেন, পাকিস্তান কোনো আফগানকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠাবে না এবং তাদের সম্পদ ও মালামাল অক্ষত থাকবে।
তিনি বলেন, কোনোভাবেই তাদের পুঁজি বা মালামালের ওপর কেউ জোর খাটাতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ অভিযোগ পেলে সেগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা অনেক পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং বাণিজ্যিক পণ্যের পরিবহন সহজ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আঞ্চলিক প্রকল্প ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা
তিনটি বৈঠকে সিএএসএ-১০০০ প্রকল্প, আফগান ট্রান্স রেললাইন, টিএপআই গ্যাস পাইপলাইন এবং মধ্য এশিয়া-পাকিস্তান রেলসংযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কৃষিপণ্যের দ্রুত পরিবহন, ট্রানজিট বাণিজ্য সহজীকরণ এবং ভিসা প্রক্রিয়া উন্নয়নের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছায় দুই দেশ।
সাংবাদিক সম্মেলনে বার্তা
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি বলেন, যদি আজকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হয়, তবে তা দুই দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংযোগ ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি আনবে।
দার বলেন, আমরা চারটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি অভিবাসন বিষয়ে—প্রথমত, প্রত্যাবাসন হবে সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণভাবে। এটি আমাদের নৈতিক, ধর্মীয় ও প্রতিবেশীসুলভ দায়িত্ব।
শেষ পর্যন্ত দুই দেশ সম্মত হয়েছে একাধিক যৌথ কমিটি গঠন করতে, যারা এই সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নে নজরদারি করবে এবং দ্বিপক্ষীয় চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করবে।