সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

শেখ হাসিনার প্রশংসায় মোদি

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক / ২১
আপডেট : শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উষ্ণ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মোদি বলেছেন, আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সন্তোষজনক। বৈঠকে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বৈঠকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন নরেন্দ্র মোদি। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ঘোষণা দেওয়া হয়। জি২০ সম্মেলন ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার জন্য গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লি আসেন প্রধানমন্ত্রী। ভারত সফরে প্রথম কর্মসূচি ছিল নরেন্দ্র মোদির বাসভবনের এ বৈঠক। ভারতের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৌঁছান নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে। শেখ হাসিনাকে নিজেই এসে অভ্যর্থনা জানান মোদি। এরপর শুরু হওয়া বৈঠক চলে ঘণ্টাব্যাপী। প্রথমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। পরে একান্তে কথা বলেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক শেষে টুইটবার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় কানেকটিভিটি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং তাঁকে জি২০ লিডার্স সামিটে আমন্ত্রণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বিশ্বের অন্য অংশের, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে জি২০-এর মতো বৃহৎ পরিসরের সামনে তুলে ধরে তাঁদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একমত হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির জন্য শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে গত রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ অঞ্চলের বর্তমান উন্নয়ন এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়। বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালু করার চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ভারতীয় রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিষ্পত্তি কার্যকর করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং উভয় পক্ষের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে।

আলোচনা ফলপ্রসূ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সন্তোষজনক। উত্তর-পূর্ব ভারতের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ

-নরেন্দ্র মোদি

বিবৃতি অনুযায়ী দুই প্রধানমন্ত্রী সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সেপা) ওপর আলোচনা শুরুর জন্য উন্মুখ, যেন পণ্য, পরিষেবা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা ও প্রচার হয়। উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পের বাস্তবায়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তারা পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ, মৈত্রী পাওয়ার প্লান্টের ইউনিট-২, খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্প যৌথ উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেন।

ভারতীয় বিবৃতি অনুযায়ী, আঞ্চলিক পরিস্থিতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি লোককে আতিথেয়তা করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। এ ছাড়া তিনি শরণার্থীদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রতি সমর্থন সমাধানের জন্য ভারতের গঠনমূলক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ কর্তৃক ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছে ভারতীয় পক্ষ। দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে সর্বস্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার সিদ্ধানের কথা জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের মধ্যকার অনিষ্পন্ন বিষয়সমূহ অফিশিয়াল পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানান। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে কানেকটিভিটি অর্থাৎ রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে চলমান কার্যক্রম বেগবান করতে উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের প্রাক্কালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- কৃষিক্ষেত্রে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চের মধ্যে সমঝোতা। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় দুই দেশের মধ্যে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা জোরদার হবে। সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদারকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তৃতীয় সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে ভারতের এনপিসিআই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে। এ সমঝোতা স্মারকের ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন সম্পাদন সহজতর হবে। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। একান্ত বৈঠকে আলোচনা হলে তা আমার জানা নেই।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর, পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল প্রমুখ।


এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD