সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন

শ্রীলঙ্কাকে ফের মার্কিন বলয়ে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকায় জুলি চাং

শরিফুল ইসলাম (প্রিন্স) / ৭৯
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২, ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট এবং অসহনীয় বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে রাজপথে নেমে এসেছে দেশটির সাধারণ মানুষ। বলা যায়, ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে চরমে পৌঁছেছে রাজনৈতিক সংকটও।

এমন অবস্থায় শ্রীলঙ্কাকেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক তৎপরতায় নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ সক্রিয়তার পুরোধা হিসেবে রয়েছেন শ্রীলঙ্কায় নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চাং। শ্রীলঙ্কাকে পুনরায় মার্কিন প্রভাববলয়ে নিয়ে আসতে বদ্ধপরিকর তিনি।

চলমান সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তা একটু একটু করে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই দ্বীপদেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা আনুকূল্যের মাত্রা একটু একটু করে বাড়ছে। শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাব মোকাবেলায় ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রনিল বিক্রমাসিংহেকে নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নিযুক্তির পর প্রথম উচ্ছ্বসিত সমর্থনও এসেছিল শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চাংয়ের কাছ থেকে।
এ প্রসঙ্গে জুলি চাংয়ের মন্তব্য ছিল, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহের নিযুক্তি এবং দ্রুত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গড়ে তোলার উদ্যোগ হল সংকট নিরসন এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে প্রথম পদক্ষেপ।

রনিল বিক্রমাসিংহেকেই এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় মার্কিন ও পশ্চিমা স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে দেখছেন জুলি চাং। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা) চুক্তির সপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এমনকি চুক্তির মার্কিন শর্তগুলো নিয়ে কোনও ধরনের দ্বিমতও ছিল না তার। সে সময় মার্কিন শর্তমাফিক চুক্তি সই হলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা কাঠামোর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল বলে মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা।

এমনকি কারও কারও মতে, এতে শ্রীলঙ্কায় মার্কিন ঘাঁটি স্থাপনের পথও খুলে যেত। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে তার বিরোধ ও শ্রীলঙ্কায় তখন দেখা দেওয়া সাংবিধানিক সংকটের পেছনে বিষয়টি বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়। ভারত ও পশ্চিমাঘেঁষা অবস্থান শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিক্রমাসিংহেকে অনেকটাই অজনপ্রিয় করে তুলেছিল। সর্বশেষ নির্বাচনেও দেশটির জাতীয় পার্লামেন্টে তার দল আসন পেয়েছিল মোটে একটি। এরপরও তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে চলমান সংকট।

জুলি চাং মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে শ্রীলঙ্কায় দায়িত্ব নেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। দেশটিতে ওই সময় সংকট ঘনীভূত হতে হতে তীব্রতর মাত্রা পাচ্ছিল। ওই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন জুলি চাং। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কার অনেক জায়গা ঘুরে এসেছেন তিনি। দেশটির সরকার ও বিরোধীপক্ষের প্রায় সব দলের সঙ্গেই আলোচনায় বসেছেন। এমনকি প্রথমবারের মতো কোনও মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে শ্রীলঙ্কার বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও কথা বলেছেন। এছাড়া স্থানীয় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা হয়েছে জুলি চাংয়ের।

বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় মার্কিন সফট পাওয়ারকে (বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক বা বাণিজ্যিকভাবে প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা) শক্তিশালী করে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন জুলি চাং। বিক্রমাসিংহে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শ্রীলঙ্কায় ইউএসএআইডির সহায়তা কার্যক্রম জোরালো হয়ে উঠেছে। মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদে শ্রীলঙ্কার সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। একই সঙ্গে দেশটির কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়টিও তার আলোচনায় উঠে এসেছে।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতিকে দেশটিকে চীনা প্রভাববলয়ের বাইরে নিয়ে আসার সুযোগ হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন পশ্চিমাপন্থী পর্যবেক্ষকরা। সম্প্রতি নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধে নিউইয়র্কভিত্তিক থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সাউথ এশিয়া ইনিশিয়েটিভস বিষয়ক পরিচালক অখিল বেরি বলেন, আইএমএফ যখন শ্রীলঙ্কাকে সহযোগিতা করার পথ খুঁজছে, ঠিক সে সময় যুক্তরাষ্ট্রেরও দেশটির জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্যাকেজ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত, যাতে সাধারণ শ্রীলঙ্কানরা তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পায়। আবার একই সঙ্গে তা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও ইন্দো-প্যাসিফিকে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

জুলি চাংয়ের ভাবনাও অনেকটা একই রকম। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে। তারা প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন চায়। দেশের রূপান্তর চায়। এর সঙ্গে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, সুশাসনের মতো বিষয়গুলোও জড়িয়ে রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় চলমান অস্থিরতার মধ্যেও আমি অনেক সুযোগ দেখতে পাচ্ছি।

এছাড়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোয় মার্কিন আগ্রহের কথাও তার বক্তব্যে উঠে এসেছে।


এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD