সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

সত্যি কি নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে রাশিয়ার অর্থনীতিতে?

শরিফুল ইসলাম (প্রিন্স) / ১৬০
আপডেট : সোমবার, ২০ জুন, ২০২২, ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া।

প্রায় চার মাসে হতে চলল এই যুদ্ধ। এই সময়ে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর ও নগর দখলে নিয়েছে রুশ বাহিনী। যদিও পশ্চিমা সহযোগিতা ও নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। তবে অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটি।

এদিকে, ইউক্রেনের সামরিক অভিযানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নানামুখী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়ার দাবি, নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতিতে এর প্রভাব যতটা পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ততটা পড়েনি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার বহর

২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়ার উপর ৮,২২৫টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বিভিন্ন দেশ। আমদানি-রফতানি, ঋণ প্রদান, লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেওয়াসহ নানা নিষেধাজ্ঞা ঝুলছে দেশটির উপরে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করা কাস্টেলাম-এর হিসাবে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ২৬টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আছে সুইজারল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপান।

রুবলের উল্লম্ফন

নিষেধাজ্ঞার পরও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে দেশটির মুদ্রা দুর্বল হওয়ার বদলে শক্তিশালী হয়েছে। জানুয়ারির পর থেকে মে পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুবল ৪০ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, রাশিয়া থেকে আমদানি পণ্যের মূল্য রুবলে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

জুনের হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় রাশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বা জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে যতটা মূল্যস্ফীতি হবে বলে ধারণা করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে তা আরও কম হবে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ১৮ থেকে ২৩ শতাংশের বদলে ১৪ থেকে ১৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে তারা।

খরচ কমিয়েছেন ভোক্তারা

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে কেনাকাটা কমিয়ে দিচ্ছেন রাশিয়ার মানুষ। পণ্যের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের হিসাব থেকে এমন তথ্যই মিলছে। গত এপ্রিলে যা ৫৪ শতাংশ কমেছে বলে রাশিয়ার দৈনিক কমারস্যান্টকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স। ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিকস সার্ভিসের হিসাবে একই মাসে খুচরা বিক্রি কমেছে ৯.৭ শতাংশ। ব্যবসা ও ভোক্তা ব্যয়ে ‘চাহিদা সংকট’ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেটনিকভও।

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে পরিবর্তন

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাশিয়ায় এপ্রিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে তিন শতাংশ। মে মাসে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল চলতি বছর জিডিপি সাত দশমিক আট শতাংশ কমতে পারে। তবে অর্থমন্ত্রী ম্যাক্সিম রেশেটনিকভ সম্প্রতি বলেছেন, এই হার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের পূর্বাভাস, বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পোৎপাদন কমায় জিডিপি কমবে ১৫ শতাংশ।

আমদানি কমেছে অনেক

যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও শিল্প উৎপাদন কমায় রাশিয়ার আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছে। রাশিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংক ওটক্রিতির তথ্য দিয়ে দ্য মস্কো টাইমস জানিয়েছে, এপ্রিলে ৫০০ কোটি থেকে এক হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে দেশটি। যেখানে ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্য। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সবশেষ মাসের আমদানি, রফতানি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

চাঙা জ্বালানি রফতানি

দ্য ইকোনোমিস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্বালানি রফতানি থেকে এখনও দৈনিক ১০০ কোটি ডলার আয় করে চলেছে রাশিয়া। হেলসিংকিভিত্তিক দ্য সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিয়ার এয়ার-এর তথ্যানুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন হামলার পর প্রথম ১০০ দিনে জ্বালানি রফতানি থেকে ৯৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে মস্কো। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল-এর তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশটির তেল রফতানি থেকে আয় ১২ শতাংশ বেড়েছে।

গাড়ি বিক্রিতে ধাক্কা

অ্যাসোসিয়েশন অব ইউরোপিয়ান বিজনেসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাহিদা কমে যাওয়া এবং কাঁচামাল সংকটের কারণে মে মাসে গাড়ি বিক্রি রেকর্ড ৮৩ শতাংশ কমেছে। রুশ পরিসংখ্যান দফতর রসস্ট্যাট-এর তথ্যানুযায়ী, গাড়ির দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। গাড়ি শিল্পের ক্ষতি কাটাতে প্রণোদনার উদ্যোগ নিতে ১৬ জুন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

সার্বিক প্রভাব কতটা?

রুশ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “প্রথম প্রান্তিকের (অর্থনৈতিক) ফলাফল এবং এপ্রিল-মে মাসের পূর্বাভাস বলছে, যতটা খারাপ আশঙ্কা করা হয়েছিল পরিস্থিতি ততটা খারাপ হবে না।” তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এলভিরা নাবিউলিনা সেন্ট পিটার্সবার্গের অর্থনৈতিক ফোরামে বলেছেন, বিদেশি চাপে রুশ অর্থনীতি যে চাপে পড়েছে, তা অনির্ধারিত সময় ধরে চলমান থাকার শঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি আগের অবস্থায় আর ফিরবে না বলেও আশঙ্কা তার।

প্রকৃত পরিস্থিতি

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়ার প্রকৃত পরিস্থিতি কী সেটি এখনও পরিস্কার নয়। দীর্ঘমেয়াদে দেশটির অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে রাশিয়া ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানিগুলো কর্মীদের বেতন দেওয়া বন্ধ করলে তা মানুষের আয়ে প্রভাব ফেলবে। তবে কর্মসংস্থান, আমদানি, রফতানিসহ অর্থনীতির সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার


এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD