হিমাচল প্রদেশের কয়েকটি মসজিদ নিয়ে কেন বিতর্ক?
- আপডেট সময় : ১০:৫৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮ বার পঠিত
ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলাতে একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া বিতর্ক আপাতত প্রশমিত হলেও এই ঘটনায় যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছে তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের অনেক অঞ্চলে। বহু জায়গায় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তাতেও নেমেছেন।
গত সপ্তাহে শুক্রবার যখন রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক দল সিমলায় শান্তির জন্য আবেদন জানাচ্ছিল, সেই সময় কিছু হিন্দু সংগঠনের কর্মী এবং স্থানীয় লোকেরা রাজ্যের মাণ্ডি জেলায় কয়েক দশকের পুরনো একটি মসজিদের কাছেই ‘হনুমান চালিশা’ পাঠ করে তাদের ‘বিক্ষোভ’ প্রদর্শন করছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, অবৈধভাবে ওই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মাণ্ডির জেলাশাসক অপূর্ব দেবগন অবশ্য দাবি করেছেন ওই জেলায় কোনো উত্তেজনা নেই।
যদিও শনিবারও সিমলা জেলার রামপুর, সুন্নি (সিমলা জেলার শহর) ও কুল্লু জেলা সদরে প্রায় একই রকম ছবি দেখা গিয়েছে। একাধিক মসজিদের কাছেই হনুমান চালিশা পাঠ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হিন্দু সংগঠনের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।
মাণ্ডিতে এই ঘটনা গত শুক্রবার, অর্থাৎ ১৩ই সেপ্টেম্বর ঘটেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে হিন্দু সংগঠনের কিছু সদস্য মাণ্ডির জেল রোড-স্থিত মসজিদের সামনে জড়ো হন।
পরিস্থিতি যে উত্তপ্ত হচ্ছে তা আঁচ করে স্থানীয় প্রশাসন ওই এলাকায় ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করে।
মসজিদের কাছে পৌঁছানোর আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে বসেই হনুমান চালিশা পাঠ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রসঙ্গত এই ঘটনা যে দিনের, সে দিনই কিন্তু মাণ্ডি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার তার শুনানিতে এক মাসের মধ্যে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে মসজিদ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তার দ্বিতীয়তল অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যে জমিতে মসজিদের বাইরের দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে তা পূর্ত বিভাগের। এই অংশ অবশ্য চিহ্নিত করার পর মসজিদের তরফে তা ভেঙে ফেলা হয়।
মাণ্ডি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ওই মসজিদ সম্পর্কে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ এসেছিল। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
এরপর এই বিষয়ে নিয়ে তেমন বিবাদ দেখা না গেলেও সিমলার সঞ্জৌলি মসজিদকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার পরই মাণ্ডিতেও আচমকাই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
এই প্রসঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তুষার ডোগরা বলেন, রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। এর কারণ হলো সরকারের নড়বড়ে মনোভাব। মানুষ যখন রাস্তায় নেমেছে ঠিক তখনই সরকার সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে মাণ্ডিতেও একটা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। সঞ্জৌলিতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। দোষী অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, বলেন তিনি।
যেভাবে বিতর্ক তৈরি হলো
সম্প্রতি মসজিদের কাছে হনুমান চালিশা পাঠের মধ্য দিয়ে যে রীতিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে তা প্রথম দেখা যায় শিমলার সঞ্জৌলিতে। ঘটনাটা ২ সেপ্টেম্বরের। তবে মূল ঘটনার সূত্রপাত ৩০ অগাস্ট রাতে। সেদিন শিমলার মালিয়ানা অঞ্চলের বাসিন্দা যশপালের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন মুসলিম যুবকের বিবাদ হয়। অভিযুক্ত যুবকেরা ওই এলাকায় একটা সেলুন চালায়।
পুলিশ ওই বিবাদের তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে যশপাল নাম ওই বাসিন্দাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকরা সঞ্জৌলির মসজিদে থাকে। আদতে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের বাসিন্দা ওই যুবকেরা।
পুলিশ যখন অভিযুক্তদের আধার কার্ড পরীক্ষা করে, তখন দেখা যায় অধিকাংশ যুবকেরই জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি বলে নথিতে উল্লেখ করা রয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সন্দিহান হয়ে মালিয়ানা, চামিয়ানার স্থানীয় লোকজন তাদের কাগজপত্র খতিয়ে দেখার দাবি জানান।
এরপরই ২ সেপ্টেম্বর মসজিদের সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। এই সময় মসজিদের অবৈধ নির্মাণের বিষয়টিও উঠে আসে। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বল প্রয়োগও করতে হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো সঞ্জৌলির মসজিদ সংক্রান্ত বিতর্কের আগুন মাণ্ডি বা হিমাচল প্রদেশের অন্য জায়গায় পৌঁছাল কীভাবে?
মাণ্ডির বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া গোপাল কাপুর বলেন, স্থানীয় লোকজন আগে থেকেই এই মসজিদ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। সিমলায় যা ঘটেছে তাতে মাণ্ডির বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজস্ব দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭০ সালের সেটেলমেন্ট রেকর্ড অনুযায়ী এই জমিটা মসজিদ। কিন্তু মসজিদের দ্বিতীয় তলে যে নির্মাণ, সে সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে কিন্তু কোনো তথ্য নেই।
তবে ওই মসজিদের ইমাম ইকবাল আলীর দাবি যে ‘অবৈধ’ নির্মাণকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল, তা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা অবৈধ নির্মাণের নোটিশ পেয়েছিলাম। যার ঠিক পরেই গণপূর্ত বিভাগের জমিতে তৈরি ওই দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মাণ্ডির জেলাশাসক অপূর্ব দেবগন বলেন, মসজিদকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তা এখন পুরোপুরি শান্ত হয়েছে। ওই মামলা পৌর কমিশনারের আদালতে বিচারাধীন ছিল এবং এখন সে সংক্রান্ত নির্দেশ এসেছে। সেই নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব পুরসভার।
একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, শুক্রবার এখানে একটা বিক্ষোভ হয়েছিল। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যে যে ব্যবস্থা প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে।