৬০০ কোটি টাকার ডেমু ট্রেন ভাঙারি হিসেবে বিক্রির পরিকল্পনা

- আপডেট সময় : ১২:৩৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫ ২৫ বার পঠিত
৩০ বছর সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র এক দশকের ব্যবধানে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ডেমু ট্রেন নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা করেছে রেলওয়ে। মেরামতের সক্ষমতা না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তি স্বার্থ, যা এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা। ঘন জঙ্গলের ভেতর পড়ে থাকা ট্রেনগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খসে পড়েছে। দেখলে মনে হয় নতুন, তবে বাস্তবে সম্পূর্ণ অকেজো।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে চীন থেকে ২০টি ডেমু ট্রেন আমদানি করা হয়েছিল, যার ব্যয় ছিল সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। অথচ মাত্র পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যেই ট্রেনগুলো বিকল হতে শুরু করে। নতুন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষ জনবল না থাকায় বারবার মেরামতের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিন বছর আগে স্থায়ীভাবে অচল হয়ে যায় সব ট্রেন।
রেল কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ডেমু ট্রেন কেনার সময় এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হয়নি। এমনকি রেলওয়ের কর্মীদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও ছিল না। দেশীয় বাজারে এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও অনুপস্থিত, ফলে দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, ট্রেনগুলো আর সচল করা সম্ভব নয়, তাই নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা চলছে। তিনি বলেন, ‘যা আর চালানো সম্ভব নয়, তা অকেজো ঘোষণা করে নিয়ম অনুযায়ী বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘রেলের নিজস্ব কোনো চাহিদা না থাকলেও উপর মহলের নির্দেশে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তি স্বার্থ। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দায়ীদের শাস্তি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হলেও এখনো অনেক নতুন রুটে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না, কারণ কোচের ঘাটতি রয়ে গেছে। অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের ফলে জনগণের অর্থ অপচয় হলেও কার্যকর সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।