মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

গাজার আল-শিফা হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক / ৫৫
আপডেট : মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ণ

দুই সপ্তাহ ধরে আল-শিফা হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভেতর অভিযান চালানোর পর সেটি ছেড়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিকে তারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে রেখে গেছে। এদিকে রাফাহতে হামলার বিকল্প নিয়ে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পারমাণবিক বোমা ফেলার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্য টিম ওয়েলবার্গ।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তারা অনেক সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে এবং অসংখ্য অস্ত্র ও গোয়েন্দা নথিপত্র পেয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যে আমরা জানতে পেরেছিলাম আল-শিফা হাসপাতালকে হামাস তাদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সেখান থেকে হামলা পরিচালনা করছে। যে কারণে আমরা সেখানে অভিযান চালাই। গাজায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস আল-শিফা প্রাঙ্গণকে তাদের একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত কয়েক দিন ধরে আল-শিফা হাসপাতাল ঘিরে ভারী গোলাগুলি ও লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। গতকাল সোমবার ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যায়।

এরপর আইডিএফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সৈন্যরা আল-শিফা হাসপাতাল এলাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনা করে এবং অভিযান শেষ করে ঐ এলাকা থেকে বেরিয়ে গেছে। সৈন্যরা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মুখোমুখি লড়াইয়ে সন্ত্রাসীদের হত্যা করেছে, অসংখ্য অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যের নথিপত্র খুঁজে পেয়েছে। হাসপাতাল জুড়ে অভিযান চালানোর সময় সৈন্যরা বেসামরিক ফিলিস্তিনি, রোগী এবং চিকিত্সাকর্মীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। যদিও ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রত্যক্ষদর্শী ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তবে স্বাধীনভাবে ঐ সব খবরের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, গত দুই সপ্তাহে আল-শিফা হাসপাতালে অন্তত ২১ জন রোগী মারা গেছে। আর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করা হয়েছে।

আইডিএফ যখন প্রথম আল-শিফায় অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়, তখন তাদের প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছিলেন, হামাস সন্ত্রাসীরা আল-শিফা হাসপাতালের ভেতর পুনরায় একত্রিত হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা গত ১৮ মার্চ ভোররাত থেকে ইসরায়েলি ট্যাংক হাসপাতালটি ঘিরে ফেলার এবং ভারী গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়ার কথা জানান। গাজা যুদ্ধের শুরুর দিকেও একবার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান চালায় আইডিএফ। সে সময় তারা বলেছিল, তাদের হাতে খবর রয়েছে যে ইসরায়েল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া জিম্মিদের হাসপাতালটির ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, হামাস নিজেদের আড়াল করে অভিযান পরিচালনা করতে গাজার বেসামরিক স্থাপনাগুলোকে ব্যবহার করছে। যে অভিযোগ অস্বীকার করেছে হামাস।

এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদ স্থান রাফাহতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে দখলদার ইসরায়েল। তবে সেখানে হামলা না চালিয়ে বিকল্প কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে গতকাল সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠক করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মার্কিন ও ইসরায়েলি চারটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এক্সিওস। এই বৈঠকটি গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ার কথা ছিল। তবে গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেওয়ায় বৈঠকটি বাতিল করেন নেতানিয়াহু। এরপর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, নেতানিয়াহু বৈঠকটি আয়োজনের জন্য নতুন সময় চেয়ে তাদের কাছে আবেদন করেন। তবে নেতানিয়াহু এমন দাবি সরাসরি অস্বীকার করেন। দখলদার ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে রাফাহতে বর্তমানে ১৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, জনবহুল ঐ অঞ্চলে যদি এখন কোনো ধরনের হামলা হয়, তাহলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তবে নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, যদি গাজায় হামাসকে তারা হারাতে চায়, তাহলে রাফাহতে হামলা চালাতেই হবে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পারমাণবিক বোমা ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্য টিম ওয়েলবার্গ। গত ২৫ মার্চ একটি টাউন হলে অন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় গাজায় পারমাণবিক বোমা হামলার পরামর্শ দেন তিনি। ঐ সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো বর্বর পারমাণবিক হামলার কথা উল্লেখ করেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

তিনি বলেন, জাপানে যেমন পারমাণবিক হামলার পর যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তেমনই গাজায় এ ধরনের হামলা হলে দ্রুত যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। কংগ্রেসম্যানের এমন মন্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, টিম ওয়েলবার্গকে এক জন জিগ্যেস করছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র কেন মার্কিন নাগরিকদের অর্থ খরচ করে অস্থায়ী জেটি তৈরি করছে? এই প্রশ্নের জবাবে টিম ওয়েলবার্গ বলেন, আমি মনে করি আমাদের সেখানে জেটি বানানো উচিত নয়। আমাদের সেখানে মানবিক সহায়তার জন্য একটি পয়সাও খরচ করা উচিত নয়। গাজার অবস্থা নাগাসাকি ও হিরোশিমার মতো অবস্থা হওয়া উচিত। দ্রুত সবকিছু করা হোক। তবে এই আইনপ্রণেতা গাজায় সত্যিকারের পারমাণবিক হামলার কথা বলেননি বলে দাবি করেছেন। এর বদলে সেখানে রূপক অর্থ ব্যবহার করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এই আইনপ্রণেতা আরো বলেন, তিনি চান রাশিয়া ও ইউক্রেনেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হোক। এতে দ্রুত যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে এবং সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ পাবে।


এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

Theme Customized By Theme Park BD